বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: তানোরের কয়েলের হাট মধ্যপাড়া এলাকায় পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছরের শিশু সাজিদকে উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। ১৫০ থেকে ২০০ ফুট গভীর ওই গর্তে পড়ে যাওয়া শিশুটিকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সন্তানের অপেক্ষায় মা রুনা বেগমের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে খেলার ছলে মায়ের পেছনে হাঁটতে গিয়ে অরক্ষিত ওই গর্তে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট বিরামহীন কাজ করলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৪০ ফুটের মতো গভীরতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
উদ্ধার অভিযানের বর্তমান পরিস্থিতি
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম জানান, শিশুটি যে গর্তে পড়েছে তার ব্যাস খুবই কম এবং গভীরতা ১৫০ থেকে ২০০ ফুটের মতো। এর ভেতরে যেকোনো জায়গায় শিশুটি আটকে থাকতে পারে। উদ্ধারকাজে বর্তমানে পাঁচটি ইউনিট সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা মূল গর্তের পাশে এক্সক্যাভেটর (ভেকু) দিয়ে প্যারালাল বা সমান্তরালভাবে ৩০-৪০ ফুটের বেশি গভীর গর্ত করেছি। সেখান থেকে সুড়ঙ্গ করে মূল গর্তে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।”
এর আগে বুধবার দুপুরে এবং রাতে কয়েক দফা ক্যামেরা নামিয়ে শিশুটির অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু উপর থেকে পড়া মাটি ও খড়ের কারণে ক্যামেরায় তাকে দেখা যায়নি। তবে বুধবার দুপুরে গর্তের ভেতর থেকে শিশুটির কান্নার আওয়াজ শোনা গিয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন উদ্ধারকর্মীরা।
যেভাবে ঘটল দুর্ঘটনা
শিশুটির মা রুনা খাতুন জানান, বুধবার দুপুরে তিনি মেজো ছেলে সাজিদ ও কোলের শিশুকে নিয়ে বাড়ির পাশের মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সাজিদ তার পেছন পেছন হাঁটছিল। হঠাৎ পেছন থেকে ‘মা’ বলে চিৎকার শুনে তিনি ঘুরে দেখেন ছেলে নেই। গর্তটির মুখ খড় দিয়ে ঢাকা থাকায় কেউ বুঝতেই পারেনি সেখানে মরণফাঁদ পাতা রয়েছে। চোখের পলকে গর্তে তলিয়ে যায় ছোট্ট সাজিদ।
চরম অবহেলা ও যান্ত্রিক সংকট
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, জমির মালিক কছির উদ্দিনের চরম অবহেলাই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। প্রায় এক বছর আগে সেচের জন্য সেমিডিপ নলকূপ বসাতে গিয়ে তিনি এই গর্তটি খনন করেন। পানি না পাওয়ায় গর্তটির মুখ খোলা অবস্থাতেই ফেলে রাখা হয়।
এদিকে উদ্ধারকাজ শুরুর দিকে যান্ত্রিক সংকটের কারণে বাধার মুখে পড়ে ফায়ার সার্ভিস। তানোর উপজেলায় শক্তিশালী কোনো এক্সক্যাভেটর না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে মাটি খোঁড়া সম্ভব হয়নি। পরে রাত ৮টার দিকে পার্শ্ববর্তী মোহনপুর উপজেলা থেকে দুটি ছোট এক্সক্যাভেটর এনে খননকাজ শুরু করা হয়।
ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিশু সাজিদকে জীবিত উদ্ধারের আশায় এখনো প্রহর গুনছে তার পরিবার ও এলাকাবাসী।










