Home চট্টগ্রাম সাতকানিয়ায় রক্তাক্ত রাত: মসজিদ কমিটির বিরোধে ভাই হারালেন শহিদুল

সাতকানিয়ায় রক্তাক্ত রাত: মসজিদ কমিটির বিরোধে ভাই হারালেন শহিদুল

নিহত মো. দিদারুল আলম

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সাতকানিয়া ( চট্টগ্রাম): সাতকানিয়ার দেওদীঘি গ্রামের আকাশটা আজ যেন ভারী। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে কান্না, হাহাকার আর প্রশ্ন-এভাবে কি মানুষকে মরতে হয়?

শনিবার গভীর রাতে যখন চারদিক নিস্তব্ধ, তখনও মো. দিদারুল আলমের বাড়িতে আলো জ্বলছিল। চলছিল পারিবারিক আলোচনা পরদিন ছিল তার ভাতিজার বিয়ে। হাসি-ঠাট্টায় মুখর ছিল সেই বৈঠক। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সব কিছুকে থামিয়ে দেয় এক ঝাঁক লোহাগাথা লোক। হাতে দেশীয় অস্ত্র, চোখে আগুন। হামলা চালায় দিদারুলদের ঘরে।

এক পর্যায়ে বুকে প্রচণ্ড আঘাত পান মো. দিদারুল। সবার চোখের সামনে, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কেউ কেউ চিৎকার করে উঠলেও, মুহূর্তের মধ্যেই নিস্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দিদারুল।

নিহতের ছোট ভাই মো. শহিদুল ইসলাম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার ভাই কোনো রাজনীতি করতো না, কোনো দলে ছিল না। মসজিদের কাজে যুক্ত ছিল, এটাই তার অপরাধ! আমাদের বিরুদ্ধে যারা এসেছে, তারা নিজেরাই হামলা চালিয়েছে। ভাইকে শাবলের আঘাতে খুন করেছে।”

ঘটনার নেপথ্যে দীর্ঘদিনের শত্রুতা, মসজিদ কমিটির নিয়ন্ত্রণ, কোরবানির পশুর হাটের চাঁদা সবকিছু মিলিয়ে জমে ছিল বারুদের স্তূপ। তা-ই বিস্ফোরিত হলো এক রাতের নিঃশব্দ আক্রমণে।

অন্যদিকে, গ্রেপ্তার হওয়া সরওয়ার আজমের ভাগনে জিল্লুর রহমানের দাবি, “বিষয়টি তেমন কিছু নয়। ভাইদের মধ্যেই ঝগড়ার সময় দিদারুল হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।” কিন্তু মৃতদেহের বুকে গভীর আঘাত, ক্ষতচিহ্ন—সবই ভিন্ন সত্য বলছে।

সাতকানিয়া থানার ওসি মো. জাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, “ঘটনার পরপরই যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে চার ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। নিহতের ভাই বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই নিশ্চিত হওয়া যাবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।”

দেওদীঘির বাতাস এখন থমথমে। একদিকে মৃত ভাইয়ের জন্য শোক, অন্যদিকে ভয় আর আতঙ্ক। প্রতিবেশীদের চোখে মুখে আতঙ্ক আর কান্না। কেউ কেউ বলছেন, ‘মসজিদের দায়িত্ব নিয়ে যদি এমন রক্ত ঝরে, তাহলে সমাজ কোথায় দাঁড়াবে?’

আজ দিদারুল নেই। তার সন্তানরা বাবার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে নির্বাক। চোখে জল নেই, শুধু অসহায় তাকিয়ে থাকা এই বুঝি ন্যায়বিচার আসবে।

📰 সত্যের পক্ষে আপনার অবস্থান জানাতে প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন।
👍 লাইক দিন, যাতে আরও মানুষ জানতে পারে দেওদীঘির রক্তাক্ত রাতের কথা।