বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: নজিরবিহীন লুটপাটের প্রেক্ষিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর থেকে চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারে জেলা প্রশাসন বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে মাঠে নেমেছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) রাত ১২টার পর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে ধলাই নদীর তীরবর্তী সাদাপাথর এলাকা থেকে প্রায় ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত পাথরগুলো পুনরায় নদীতে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চুরি হওয়া সব পাথর ফেরত না আসা পর্যন্ত অভিযান চলবে। পাশাপাশি, পাথর চুরিতে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সমন্বয় রেখে অভিযান চালানো হচ্ছে। সাদাপাথরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা ও অবৈধ উত্তোলন বন্ধ করাই মূল লক্ষ্য। যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় পর্যটন কেন্দ্র থেকে চুরি হওয়া সাদা পাথর পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ জানিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্তগুলো হলো:
১. জাফলং ইসিএ এলাকা ও সাদা পাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
২. গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্ট যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।
৩. অবৈধ ক্রাশিং মেশিনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নসহ বন্ধ করার জন্য অভিযান চলবে।
৪. পাথর চুরির সঙ্গে জড়িত সকলকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা হবে।
৫. চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা হবে।
এদিকে, দুদক সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, যাদের যোগসাজশে নির্বিচারে পাথর লুট হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে তদন্ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রশাসন ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা আছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক শত কোটি টাকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের ঘটনায় তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা অভিযোগ করেছেন, প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আশ্রয়ে এই লুটপাট বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এতে শুধু প্রাকৃতিক সম্পদই নয়, পুরো পর্যটন শিল্পই হুমকির মুখে পড়েছে।










