Home পরিবেশ যৌন উত্তেজক ‘সান্ডা তেল’ থেকে ভাইরাল শ্লোগান: একটি বিশ্লেষণ

যৌন উত্তেজক ‘সান্ডা তেল’ থেকে ভাইরাল শ্লোগান: একটি বিশ্লেষণ

বিশেষ প্রতিবেদন

সম্প্রতি “সান্ডা” নামটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার শীর্ষে। আরব দেশগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ কেউ এই প্রাণী ধরার ভিডিও দিচ্ছেন, কেউবা কফিলের জন্য “সান্ডা ধরেছি” শিরোনামে ছবি শেয়ার করছেন। বিষয়টি নিয়ে যেমন হাস্যরস চলছে, তেমনি গুজব আর বিভ্রান্তিও ছড়াচ্ছে সান্ডা খাওয়া যায় কিনা, এটি ইসলামে হালাল কি না, এমন নানা প্রশ্ন ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমে। এমনকি দেশের ছাত্র আন্দোলনের শ্লোগানেও ঢুকে পড়েছে এই শব্দ। কিন্তু আসলে কী এই সান্ডা? কেন এত আলোচনা?

সান্ডা কী?
সান্ডা একটি মরুভূমি পরিবেশে বসবাসকারী সরীসৃপ প্রাণী, যার বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx hardwickii। দেখতে গিরগিটির মতো, লেজ মোটা এবং কাঁটাযুক্ত। এটি সাধারণত পাকিস্তান, ভারত ও আফগানিস্তানের বালুপ্রধান অঞ্চলে পাওয়া যায় এবং আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসায় এর চর্বি থেকে তেল তৈরি করে যৌন উত্তেজক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ধর্মীয় অবস্থান কী বলে?
ইসলামে এই প্রাণীটি খাওয়া হালাল না হারাম তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। হাদিস অনুসারে, সাহাবিগণ রাসূল (সা.)-এর সামনে সান্ডা পরিবেশন করলে তিনি নিজে খাননি, তবে অন্যদেরও বারণ করেননি। সাহাবি খালিদ বিন ওয়ালিদ তখন তা খেয়ে ফেলেন।

হানাফি মাজহাবে এটিকে ‘মাকরূহ তাহরিমি’ বা না খাওয়াই উত্তম বলে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে শাফেয়ি, মালিকি ও হাম্বলি মাজহাবের মতে এটি হালাল।

তৌরাতে (ইহুদি ধর্মগ্রন্থ) এটি নিষিদ্ধ প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত। খ্রিস্টানদের বাইবেলেও এ ধরনের প্রাণীকে অপবিত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চিকিৎসাগত ব্যবহার ও বিপন্নতা
সান্ডার তেল যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হলেও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত শিকারের ফলে এটি এখন বিপন্ন প্রাণী হিসেবে গণ্য হচ্ছে। ভারতের বন আইন ও আন্তর্জাতিক CITES চুক্তি অনুযায়ী সান্ডার শিকার ও বাণিজ্য নিষিদ্ধ।

মানবিক দিক থেকে একটি সাক্ষাৎকার
সৌদি আরব প্রবাসী কামাল উদ্দিন, যিনি রিয়াদে একজন নির্মাণ শ্রমিক, জানান, “আমি প্রথমে জানতামই না এই প্রাণী খাওয়া যায়। একদিন কফিল বলল, আজ সান্ডা আছে রান্নায়। আমি ঘাবড়ে গেলাম। পরে দেখি আরবরা অনেক উৎসাহে খাচ্ছে। আমি খেলাম না, কিন্তু ছবি তুলে দেশে পাঠালাম। তারপর দেখি ভাইরাল!”

বাংলাদেশের এক আলেম মাওলানা তানভীর হোসাইন বলেন, “সান্ডা খাওয়ার বিষয়ে দ্বিধা থাকলেও এটা নিশ্চিত যে, এটি হারাম নয়। শরীরের ক্ষতি না হয়, এমন সব প্রাণী খাওয়া ইসলামে জায়েজ, যদি রাসূল (সা.) তা নিষিদ্ধ না করে থাকেন। তবে অরুচিকর হলে না খাওয়াই উত্তম।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ছাত্র আন্দোলনে ‘সান্ডা’ শব্দটির ব্যবহার কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক ও প্রতীকী। এই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারিয়া ইসলাম বলেন, “সান্ডা নিয়ে যে ধরনের ট্রল হচ্ছে, তা কিছুটা হাস্যরস হলেও অনেক সময় এতে বিষয়বস্তু বিকৃত হয়।”

সান্ডা কোনো নতুন আবিষ্কার নয়, এটি বহু যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এর ব্যবহার, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের প্রয়োজন নির্ভুল তথ্য জানা। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার হাস্যরস নয়, এটি একটি বিপন্ন প্রাণী যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অংশ।