Home আন্তর্জাতিক শিপিং সারচার্জে সংকটে পাকিস্তানের বৈদেশিক বাণিজ্য

শিপিং সারচার্জে সংকটে পাকিস্তানের বৈদেশিক বাণিজ্য

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:

যুদ্ধের আবহে আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিগুলো পাকিস্তানে আমদানি-রপ্তানি পণ্যে বাড়তি ভাড়া চাপাচ্ছে । এরই মধ্যে কিছু কোম্পানি এ মাসের মাঝামাঝি থেকে জরুরি সারচার্জ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিশ্বখ্যাত শিপিং প্রতিষ্ঠান সিএমএ সিজিএম এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ১৫ মে থেকে পাকিস্তানে আসা-যাওয়া করা সব জাহাজে ‘ইমার্জেন্সি অপারেশনাল রিকভারি সারচার্জ’ (ইওআরএস) কার্যকর হবে। এই আদেশ ৬ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, ল্যাটিন আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য থাকবে।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। এ অবস্থায় সেবা চালু রাখতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বাড়তি চার্জ অপরিহার্য। সারচার্জের পরিমাণ প্রতি ইউনিটে ৩০০ থেকে ৮০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে, যা পাকিস্তান থেকে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে প্রযোজ্য হবে।

পাকিস্তান শিপস অ্যাজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (পিএসএএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাজপার জানান, এই বাড়তি ভাড়ার ফলে পরিবহনে সময়ও বেড়ে যেতে পারে। তার ভাষায়, “এ ধরনের সারচার্জ শুধু খরচ বাড়াবে না, বরং রপ্তানি প্রতিযোগিতাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের উচিত দ্রুত কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু করা।”

তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি পণ্যবাহী আন্তর্জাতিক জাহাজগুলোর নিজস্ব বন্দর ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির পরিপন্থী।

এদিকে, করাচি কাস্টমস অ্যাজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুস সুমরো জানান, শুধু সিএমএ সিজিএম নয়, আরও একটি বিদেশি কোম্পানিও একই ধরনের সারচার্জ আরোপ করেছে। অথচ সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা সামুদ্রিক জলসীমায় নয়। “কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাব পড়ছে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের ওপর।”

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাকিস্তানের করাচি বন্দর দিয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৭,০০০ টিইইউস কন্টেইনার রপ্তানি হয়ে থাকে, যার মধ্যে অধিকাংশ গন্তব্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলো। বর্তমানে এসব চালানই হুমকির মুখে।

তবে করাচি বন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোথাও কোনো জাহাজজট নেই। তিনি বলেন, “আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, যাতে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে পারি।”

ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ ঢোকার অনুমতি:

পাকিস্তান সরকার সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজগুলোর প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানায়, ভারত থেকে আসা কার্গো যদি পাকিস্তানে খালাস না হয়ে কেবলমাত্র পুণরায় অন্য গন্তব্যে পাঠানোর জন্য আসে, সেক্ষেত্রে তা নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়।

৩ মে সমুদ্রবন্দর মন্ত্রণালয় থেকে এক নির্দেশনায় জানানো হয়, “ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজ পাকিস্তানে ভিড়তে পারবে না এবং পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজও ভারতের বন্দরে ঢুকতে পারবে না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অনুমতি বিবেচনা করা হবে।”

পিএসএএ সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল যে, এই নিষেধাজ্ঞা কি ‘রিশিপমেন্ট অন বোর্ড’ পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কিনা। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, RoB পণ্য যেগুলো পাকিস্তানে খালাস না হয়ে কেবল ট্রানজিট  হিসেবে ব্যবহৃত হয়—তাদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময়ে এমন স্পষ্ট ব্যাখ্যা আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে। করাচি ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. রউফ মাহমুদ বলেন, “এ ধরনের সংকট সামাল দিতে হলে শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিসরে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।”

পিএসএএ আরও জানায়, পাকিস্তানে ভেড়ানো বড় আকারের জাহাজগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্য ভারতীয় উৎসের। ভারতের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানিগুলোর মনোভাব পরিবর্তনে প্রভাব ফেলতে পারে।

এর আগে ২ মে ভারত তার বৈদেশিক বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন এনে পাকিস্তানের সব পণ্য আমদানি ও ট্রানজিট নিষিদ্ধ করে। এর ফলে করাচি বন্দর থেকে প্রতি সপ্তাহে ৬ থেকে ৭ হাজার কন্টেইনার রপ্তানির কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।