আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে সিন্ধু নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ এবং করপোরেট কৃষিকাজের বিরোধিতায় ভয়াবহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার নওশেহরো ফিরোজ জেলার মোরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের জাতীয় সড়কে অবরোধ দিতে বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের গুলিতে একজন নিহত ও অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যও।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সংঘর্ষে উত্তেজিত জনতা সিন্ধ প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়াউল হাসান লঞ্জারের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভিডিওতে দেখা যায়, মুখোশধারী লোকজন বাড়ির আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেয় এবং এসির যন্ত্রাংশ ছুঁড়ে ফেলে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মন্ত্রী লঞ্জারের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি ছোড়ে ও হাওয়া ফাটায়। কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায়।
বিক্ষোভকারীরা জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক থেকে ইউরিয়া সার লুট করে ও কয়েকটি কার্গো ট্রেইলারেও আগুন দেয়। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আহত এক পুলিশ সদস্য হাসপাতালে ঢুকতে চাইলে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এছাড়া একটি পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার কক্ষেও লাঠিসোঁটা হাতে ঢুকে কিছু লোক নগদ অর্থ লুট করে বলে অভিযোগ।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশের গুলিতে নিহত হন জাহিদ লাঘারি নামে এক ব্যক্তি। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরফান লাঘারি, মোহসিন, বিশাল লাঘারি ও মীর হাজার কোরাই। আহতদের প্রথমে মোরো হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে গুরুতরদের নবাবশাহ ও বেনজিরাবাদ জেলার পিপলস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহত জাহিদ লাঘারির শরীরে দুটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুরুতর অবস্থায় ভেন্টিলেশনে রয়েছেন ফারহান লাঘারি।
সংঘর্ষের সময় একদল বিক্ষুব্ধ জনতা ডিএসপি ফয়াজ দাহেরিকে ধরে মারধর করে। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়। মোরো থানায়ও পাথর ছোঁড়া হয় এবং পুলিশের পাল্টা টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। সন্ধ্যার পর পুরো শহর অচল হয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ এবং মানুষ ঘরে ঢুকে যায়।
সিন্ধ প্রদেশজুড়ে বাড়ছে অস্থিরতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে নবাবশাহ, দাদু ও হায়দারাবাদ জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সিন্ধ প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি এই ঘটনাকে “গভীরভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিন্দনীয়” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। যারা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ও মানুষের নিরাপত্তা বিনষ্ট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”