Home আন্তর্জাতিক ফ্রিটাউনের সকাল থেকে গোলা বন পর্যন্ত

ফ্রিটাউনের সকাল থেকে গোলা বন পর্যন্ত

সংগৃহীত ছবি

পথিকের ডায়েরি

সাইয়েদ আহমেদ : সিয়েরা লিওনের ফ্রিটাউনে নেমেই প্রথম যে বিষয়টি আমাকে মুগ্ধ করেছিল, তা হলো পাহাড় আর সমুদ্রের এক অসাধারণ মেলবন্ধন। আটলান্টিক মহাসাগরের ঢেউ ঠিক যেন শহরের পায়ের নিচে এসে পড়েছে। হালকা বাতাসে নোনাধারার গন্ধ, দূরে মাছ ধরার নৌকা, আর ব্যস্ত বাজারের কোলাহল সব মিলিয়ে প্রাণচঞ্চল এক সকাল।

লামলি বিচে পা রাখতেই মনে হলো সময় যেন ধীরে চলে এখানে। সাদা বালুর ওপর সূর্যের আলো ঝলমল করছে, স্থানীয় তরুণরা ফুটবল খেলছে, আর পর্যটকরা নীরবে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। এক বৃদ্ধ জেলে কাছে এসে বললেন, এখন সিয়েরা লিওন শান্তির দেশ, যুদ্ধ নেই, শুধু মাছ আর হাসি।

সংগৃহীত ছবি

পরদিন রওনা দিলাম বনানা আইল্যান্ডের দিকে। নৌকায় করে কয়েক ঘণ্টা যাত্রা। পথে সমুদ্রের গভীর নীল রঙে মন ভরে গেল। দ্বীপে পা রাখতেই যেন এক হারিয়ে যাওয়া জগতের সন্ধান মিলল কোলাহলহীন, প্রকৃতির টানে ভরা। স্থানীয় গাইড জোসেফ বললেন, এই দ্বীপে একসময় দাসদের আশ্রয় ছিল, এখন এখানে শুধু ইতিহাস আর প্রকৃতির বন্ধুত্ব।

এরপর যাত্রা গোলা রেইনফরেস্ট ন্যাশনাল পার্কে। সবুজের এক অগাধ রাজ্য। চিম্পাঞ্জি, নানা প্রজাতির পাখি আর ঘন বৃক্ষরাজির মাঝে মনে হলো আমি যেন পৃথিবীর হৃদয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সূর্যের আলো পাতা ভেদ করে পড়ছে, বাতাসে বনভূমির গন্ধ। এই নির্জন অথচ জীবন্ত প্রকৃতি যেন সিয়েরা লিওনের আত্মার প্রতিচ্ছবি।

ফ্রিটাউনে ফেরার সময় আকাশে সূর্য ডুবছিল ধীরে। সমুদ্রের পাড়ে বসে ভাবছিলাম, কত রক্ত আর কান্না পেরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই দেশ। তবু তাদের চোখে আমি দেখেছি হাসি, আশা আর ভবিষ্যতের বিশ্বাস। সিয়েরা লিওন যেন আমাকে শিখিয়ে দিল যে দেশ একদিন ধ্বংসের প্রান্তে ছিল সেও আবার জেগে উঠতে পারে নতুন ভোরের আলোয়।