বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ছাত্রীহল এলাকায় বানরের উৎপাত তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রীহলে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী বানরের কামড়ে আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বন বিভাগের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এখনো কার্যকর সমাধান মেলেনি। ফলে ক্যাম্পাসজুড়ে ছাত্রীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে থাকা দুর্রে সামাদ রহমান হল ও সুহাসিনী দাস হল এলাকায় সবচেয়ে বেশি বানরের উৎপাত দেখা দিয়েছে। আশপাশে গাছপালা ও পাহাড়ি বনাঞ্চল থাকায় বানরের দল প্রায়ই খাবারের খোঁজে হলে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে দুপুর ও বিকেল বেলায় বানরগুলো হলের বারান্দা, রান্নাঘর এমনকি কক্ষেও ঢুকে পড়ছে। অনেক সময় তারা ছাত্রীদের ওপর আক্রমণ করে কামড় দিচ্ছে বা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বানরের ভয়েই তারা অনেক সময় ক্যান্টিন বা হলের রান্নাঘরে যেতে সাহস পান না। একজন ছাত্রী বলেন, “আমরা দিনে–দুপুরেও হলের বারান্দায় বের হতে ভয় পাই। বানরগুলো একদম কাছে এসে খাবার ছিনিয়ে নেয় বা ঝাঁপিয়ে পড়ে।”
এরই মধ্যে বানরের কামড়ে আহত শতাধিক শিক্ষার্থীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা ও রেবিস প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। আহতদের শরীরের হাত, পা ও মুখে কামড়ের দাগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বানরের উৎপাত নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- ছাত্রীহলগুলোর চারপাশে জাল বা নেট স্থাপন,
- বড় গাছের ডালপালা ছাঁটাই,
- বানর ধরার জন্য নিরাপদ ট্র্যাপ বসানো,
- নিরাপত্তাকর্মীদের পাহারা জোরদার করা।
তবে এসব উদ্যোগেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সিকৃবির প্রক্টর ড. নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী আইনের কারণে বানর নিধন বা স্থানান্তরের মতো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানবিক ও আইনসঙ্গত সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
এ বিষয়ে সিলেট বন বিভাগের কর্মকর্তা জানান, বানরগুলো পাহাড়ি এলাকার বন্যপ্রাণী হওয়ায় তাদের ধরে সরিয়ে নেওয়া আইনগতভাবে জটিল। তবুও তারা সিকৃবি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপদে বানর স্থানান্তরের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তারা বানর নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী সমাধান, নিরাপত্তা বাড়ানো এবং আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বহনের দাবি জানিয়েছেন।