Home First Lead সিসিসিআই নির্বাচন ঘিরে ব্যবসায়ী মহলে নতুন প্রত্যাশা, স্বচ্ছতা ও কার্যকর নেতৃত্বের খোঁজে

সিসিসিআই নির্বাচন ঘিরে ব্যবসায়ী মহলে নতুন প্রত্যাশা, স্বচ্ছতা ও কার্যকর নেতৃত্বের খোঁজে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রভাবশালী বাণিজ্যিক সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই)র আসন্ন নির্বাচন ঘিরে ব্যবসায়ী সমাজে অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছে। বহু বছর ধরে একটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থেকে কার্যত জড়তায় আক্রান্ত সংগঠনটি এবার নতুন নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। রবিবার মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে অন্তত তিনটি প্যানেল ও বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

একসময় চেম্বারকে ব্যবসায়ী মহলের অনেকে মনে করতেন “অকার্যকর ও নামমাত্র সংগঠন”। নীতি সহায়তা, বন্দরকেন্দ্রিক সমস্যার সমাধান কিংবা শিল্প-উদ্যোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় অদক্ষতা ও উদাসীনতার কারণে চেম্বার ছিল প্রায় অচল অবস্থায়। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে দীর্ঘ প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দখলদারিত্ব ভাঙার পর পরিস্থিতি পাল্টেছে। এখনকার নির্বাচনী উচ্ছ্বাসই সেই পরিবর্তনের প্রমাণ।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ এরশাদ উল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে চেম্বার নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, “চেম্বার বছরের পর বছর রাহুর গ্রাসে ছিল, সেখান থেকে মুক্তি ঘটেছে। ব্যবসায়ীদের আগ্রহই প্রমাণ করে তারা পরিবর্তন চায়। আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা—আবার যেন কোন রাহুর গ্রাসে না পড়ে।” তিনি পরিষ্কার করে জানান, বিএনপি এ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে না এবং একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়।

মোহাম্মদ আমিরুল হক

 চিটাগাং চেম্বার ও এফবিসিসিআিই’র প্রাক্তন পরিচালক মো. আমিরুল হক-এর নেতৃত্বে একটি প্যানেল জমা দেয়া হয়েছে। এই প্যানেলের নাম ‘ওয়ান টিম’।  আমিরুল হক প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিকম গ্রুপের চেয়ারম্যান,  ডেলটা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজেরও শীর্ষ নির্বাহী। এই শিল্পপতি ২০০৮ সালের পর রবিবার  প্রথম চিটাগাং চেম্বারে গেলেন। ওয়ান  ইলেভেনের পর চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কারের অন্যতম স্থপতি মো. আমিরুল হক আরও অনেক ব্যবসায়ী শিল্পপতির মত এতদিন ছিলেন চেম্বার বিমুখ।

যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একাধিক প্রাক্তন সভাপতি, পরিচালক ও পোশাকশিল্প খাতের প্রভাবশালী উদ্যোক্তাদের সমর্থন রয়েছে ওয়ান টিম প্যানেলের প্রতি। চিটাগাং চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী,  প্রকৌশলী আলী আহমদ, সরোয়ার জামাল নিজাম ( সাবেক সাংসদ), চিটাগাং চেম্বারের প্রাক্তন সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এশিয়ান অ্যান্ড ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি এম  এ সালাম, বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্হাপনা পরিচালক এবং চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভির সমর্থিত প্যানেল ’ওয়ান টিম।’

অর্ডিনারি গ্রুপে ২২জন, অ্যাসোসিয়েট গ্রুপে ৮ জন এবং টাউন ও ট্রেড গ্রুপে ৬জন প্রার্থী অর্থাৎ মোট ৩৬ জন প্রার্থী রয়েছেন এই প্যানেল থেকে।

এস এম নুরুল হক

প্রাক্তন সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নুরুল হকের নেতৃত্বে ‘চট্টগ্রামের সচেতন ব্যবসায়ী সমাজ’ নামে আরেকটি প্যানেল লড়াইয়ে নামছে। তিনি বিজিএমইএ-র প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি এবং চেম্বারের অনিয়ম-বিরোধী সোচ্চার মুখ। তাঁর প্যানেলে রয়েছেন এরশাদ উল্লাহর ছেলে, অর্থাৎ রাজনৈতিক রঙিন সম্পর্কও এ নির্বাচনে দৃশ্যমান।

আমজাদ হোসেন চৌধুরী

এছাড়া প্রাক্তন পরিচালক আমজাদ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে আরেকটি প্যানেল রয়েছে। তিনি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব লায়ন মোঃ আসলাম চৌধুরী (এফসিএ)এর অনুজ। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড  রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।

চারটি ক্যাটাগরিতে ৭১ জন ব্যবসায়ী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ২৪টি পরিচালক পদের মধ্যে ১৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এর মধ্যে অর্ডিনারি ক্যাটাগরি ১২টি পদ ও অ্যাসোসিয়েট ক্যাটাগরির ৬টি পদ রয়েছে। অর্ডিনারির ১২টি পদের বিপরীতে মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন ৪৮ জন। আর অ্যাসোসিয়েট ক্যাটাগরির ৬টি পদের বিপরীতে মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন ১৭ জন। তাদের সবাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপের ৬টি পদে নির্বাচন হবে না। এই দুটি ক্যাটাগরিতে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ছয়জন প্রার্থী পূর্বনির্ধারিত থাকায় তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।

মনোনয়ন যাচাই হবে ২৩ সেপ্টেম্বর, বৈধ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ২৫ সেপ্টেম্বর, আর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ৮ অক্টোবর। ভোট হবে আগামী ১ নভেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে।

চেম্বারের নির্বাচন শুধু নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়, এটি চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকনির্দেশক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। বন্দরকেন্দ্রিক সমস্যার সমাধান, সরকারের সঙ্গে কার্যকর সংলাপ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে পারবে কিনা—ব্যবসায়ী সমাজ এখন তাকিয়ে আছে সেই উত্তরণের দিকে।