বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ২০২৩ সালের মাঝামাঝি, এক অদ্ভুত অথচ শিরোনাম-দখলকারী ঘটনা সাক্ষী হলো ভারত-পাকিস্তানের মাঝে। পাকিস্তানে সিন্ধু প্রদেশের এক মুসলিম নারী, সীমা হায়দার সন্তানদের নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করলেন। উদ্দেশ্য ছিল উত্তর প্রদেশের গ্রেটার নয়ডায় থাকা ভারতীয় যুবক সচিন মীনার সঙ্গে প্রতিবেশ গড়ে তোলা।
▸ আইনগত ঝুকি ও রাজনৈতিক জলঘোলা
ভারতে আসার সময় সীমা ভিসা ছাড়াই নেপালের মাধ্যমে প্রবেশ করেন, যা একটি আইনর বিরোধী অলঙ্ঘন। টানকে টানে ভালোবাসা হলেও পরে তিন জামিনে মুক্ত হয়েছেন এবং বর্তমানে মিডিয়ায় সক্রিয় আলোচনার থাকান।
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী মহলে সীমার অবস্থান নিয়ে শুরু হয় নানা বিতর্ক। বিজেপির কিছু অংশ ও দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীগুলো সীমার আগমনে নিরাপত্তা ইস্যু তুলে ধরে এবং দাবি জানায় তার বিতাড়নের। কিন্তু স্থানীয় জনগণের একটা বড় অংশ এবং গণমাধ্যমে তাকে ঘিরে সহানুভূতির সুরও লক্ষ্য করা যায়।
▸ সীমার স্বীকারোক্তি: “আমি পাকিস্তানের মেয়ে ছিলাম, এখন ভারতের বৌ”
২০২৫ সালের মে মাসে, একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে সীমা হায়দার বলেন, “আমি পাকিস্তানের মেয়ে ছিলাম, কিন্তু এখন আমি ভারতের বৌ। আমি এই দেশকেই আমার ঘর মনে করি।” তিনি বলেন, “আমি সচিনকে ভালোবাসি। আমি চাই আমাদের সন্তানরা এখানেই বড় হোক। পাকিস্তানে ফিরবো না। আমার অতীত ছেড়ে আমি এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে তাকাচ্ছি।”
সীমার ভাষায়, পাকিস্তানে তার অতীত ছিল শৃঙ্খলিত, সেখানে নারীর স্বাধীনতা সীমিত। কিন্তু ভারতে এসে তিনি স্বাধীনভাবে জীবন গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছেন। সীমার কথায়, “ভারতে এসে আমি যেন নতুন জীবন পেয়েছি।”
▸ পরিবার ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সীমার চার সন্তান এখন ভারতে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সচিনের পরিবার প্রথমে অস্বস্তিতে থাকলেও ধীরে ধীরে সীমাকে গ্রহণ করতে শুরু করেছে। স্থানীয় পঞ্চায়েতও তাদের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে মেনে নেওয়ার পথে এগোচ্ছে।
▸ সরকারি অবস্থান
উত্তর প্রদেশ পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও সীমার নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিষয়টি বিবেচনাধীন রেখেছে। কোনও স্থায়ী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তিনি অস্থায়ী বাসিন্দা হিসেবেই থাকবেন।
▸ মিডিয়ার চোখে
সীমা হায়দার এখন গণমাধ্যমে ‘ভারতের বউ’ নামে পরিচিত। তাকে নিয়ে ইতোমধ্যে একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণের কথাও শোনা যাচ্ছে। একাধিক ইউটিউব চ্যানেল ও সংবাদ মাধ্যম তার জীবনকাহিনি নিয়ে ধারাবাহিক প্রচার চালাচ্ছে।
▸ শেষ কথা
সীমা হায়দারের কাহিনি শুধু এক নারীর সীমান্ত পেরিয়ে আসা নয়, বরং ভালোবাসা, সামাজিক প্রতিরোধ, নিরাপত্তার প্রশ্ন, এবং পরিচয় নির্মাণের এক জটিল ও স্পর্শকাতর কাহিনি। ভবিষ্যতে এই গল্প কোন দিকে মোড় নেয় তা সময়ই বলবে, তবে আপাতত তিনি ভারতেই ঘর বাঁধতে চান — ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিয়ে।