মোঃ মাসুদ রানা, রামগড়: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের থলিবাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি সীসা তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়েছে মোবাইল কোর্ট। বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শামীমের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে কারখানার মালিক মো. ফজলুল ইসলামকে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর অধীনে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, কারখানাটিতে পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরি করা হচ্ছিল। এর ফলে আশেপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হওয়ার পাশাপাশি মানব স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছিল।
সীসা কারখানা কী?
সাধারণত পুরোনো ব্যাটারি, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ও শিল্প বর্জ্য থেকে সীসা সংগ্রহ করে বিভিন্ন ছোট–বড় কারখানায় তা প্রক্রিয়াজাত করা হয়। বৈধভাবে নিবন্ধিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপদ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ কাজ করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে গ্রামীণ ও শহরতলীর নির্জন এলাকায় অবৈধভাবে সীসা কারখানা গড়ে ওঠে। এ ধরনের কারখানায় সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় সীসার ধোঁয়া ও গুঁড়া সরাসরি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
জনস্বাস্থ্যের জন্য কুফল
চিকিৎসকদের মতে, সীসা মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি ও যকৃতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে সীসার সংস্পর্শে থাকলে শিশুদের মানসিক বিকাশে সমস্যা দেখা দেয়, বুদ্ধি ও শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি বন্ধ্যাত্বের মতো জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। ধোঁয়া শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পরিবেশগত সমস্যা
অবৈধ সীসা কারখানায় পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরি করার ফলে বাতাসে বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে, যা আশেপাশের মাটি, পানি ও কৃষিজমি দূষিত করে। বিষাক্ত সীসা ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে গেলে তা দীর্ঘমেয়াদে পানীয় জলের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করে। তাছাড়া এলাকার কৃষিজ পণ্য ও ফলমূলেও সীসার অবশিষ্টাংশ থেকে যেতে পারে, যা পরোক্ষভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
প্রশাসনের অবস্থান
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শামীম বলেন, “পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এ ধরনের অবৈধ শিল্প চালানো যাবে না। রামগড়ে অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
স্থানীয়রা জানান, এ ধরনের কারখানার ধোঁয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে ছিলেন তারা। অভিযানের ফলে এলাকার মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।