সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নির্যাতনের ছবি, সুদের কারবার নিয়ে উদ্বেগ
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কুমিল্লা: কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় আলী আকবর (৭০) নামে এক বৃদ্ধকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ওই বৃদ্ধকে খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। এ সময় স্থানীয়রা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিন, রসুলপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বোরহান ও তার বাবা আবুল কালাম দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে সুদের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
ভুক্তভোগী আলী আকবর, মৃত আজগর মিয়ার মেয়ের জামাই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বশুরবাড়ি রসুলপুরেই বসবাস করছেন। প্রায় দুই বছর আগে নিজের ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য বোরহানের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। পরে বোরহান সুদসহ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে দেন। সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় সোমবার সকালে বোরহান লোকজন নিয়ে আলী আকবরকে রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন করেন।
ভুক্তভোগীর ছেলে ইব্রাহীম বলেন, “আমরা টাকা পরিশোধের জন্য সময় চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমার বাবাকে ধরে নিয়ে খুঁটিতে বেঁধে মারধর করে। এখন তিনি চান্দিনা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি আছেন।”
অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানার পর ফোন কেটে দেন। পরবর্তী কলগুলিও তিনি রিসিভ করেননি।
চান্দিনা থানার ওসি মো. জাবেদ উল ইসলাম বলেন, “ঘটনার বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সুদের কারবার: গ্রামীণ সমাজে অমানবিক পরিণতি
বাংলাদেশের অনেক পল্লী অঞ্চলে অবৈধ সুদের কারবার (মাইক্রোক্রেডিটের ছায়ায় ব্যক্তিগত ঋণ ব্যবসা) এখনো দুঃসহ বাস্তবতা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে এসব ‘মাহাজনি’ ঋণ প্রথা মানুষের ওপর ভয়াবহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে।
২০২২ সালে রাজশাহীর বাগমারা, গাইবান্ধা, এবং নড়াইল জেলায়ও অনুরূপভাবে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থদের প্রকাশ্যে অপমান বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনায় গ্রামীণ অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার ভাঙন এবং সামাজিক অবক্ষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকিং সুবিধা এবং সরকারি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নাগালের মধ্যে আনতে না পারায় অনেকেই বাধ্য হয়ে এই ‘অবৈধ সুদচক্রে’ জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা থেকে শুরু হয় সামাজিক নির্যাতন, অপমান, এমনকি আত্মহত্যা পর্যন্ত ঘটনা।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের সুদ ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ এবং গ্রামীণ পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা সম্প্রসারণ ছাড়া এই মানবিক বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়।