বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ: প্রায় এক বছর হতে চললো, নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে সুনামগঞ্জ জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কার্যক্রম। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির দরজায় ঝুলছে তালা। প্রশাসক নিয়োগের পরও কোনোরকম কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন জেলার কয়েক হাজার আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী।
চেম্বার কার্যালয়টি শহরের উকিলপাড়া এলাকায় চারতলা ভবনে অবস্থিত। আয়, ব্যবস্থাপনা, আমদানি-রপ্তানির আইনি প্রক্রিয়া—সবই গুটিয়ে গেছে। ভবনটিতে কোনো অফিস ভাড়া নেই, জমা পড়ছে না এক টাকাও। চেম্বারের সদস্যদের অভিযোগ, এমন স্থবিরতা একদিকে যেমন ব্যবসা পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে, অন্যদিকে এর আইনি শূন্যতার সুযোগ নিয়ে অনিয়ম-দলীয়করণ ও দখলের আশঙ্কাও বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ আমদানিকারক বলেন, “আগামী মাসেই আমাদের অনেকের আইআরসি নবায়ন ও এলসি জমা দেওয়ার সময়। কিন্তু চেম্বারই যদি না খোলে, আমরা যাব কোথায়? অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে ঢাকায় গিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু সব ব্যবসায়ীর সেই সুযোগ নেই।”
২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পরপরই চেম্বার ভবন হামলার শিকার হয়। আন্দোলনরত জনতা ভবনের আসবাবপত্র বাইরে বের করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর চেম্বারের নেতৃত্বে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুকুট ও তার ভাই যুবলীগ নেতা খায়রুল হুদা চপলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটে।
পরিস্থিতি শান্ত হলেও চেম্বারের কার্যক্রম আর সচল হয়নি। বিএনপি নেতা ও চেম্বার সদস্য আবু সাঈদ মো. খালিদের নেতৃত্বে একটি পক্ষ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রশাসক নিয়োগের আবেদন করলে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালকে চেম্বারের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে একটি বৈধ ও কার্যকর কমিটি গঠন করা।
কিন্তু প্রায় ৪ মাস কেটে গেলেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। বরং মাঠে নেমে চেম্বার ভবনের তালা খোলা বা কার্যক্রম শুরু করার কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
চেম্বার সদস্য খালিদ বলেন, “আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় প্রশাসক নিয়োগ করিয়েছি, কিন্তু কার্যক্রম এখনো বন্ধ। এটা দেখে মনে হয়, আগের দখলদাররাই আবার পেছন থেকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।”
তবে চেম্বারের বর্তমান পরিচালক জিএম তাশহিজ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি আট বছর ধরে চেম্বার সদস্য। আর্থিক রিপোর্ট থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ম মেনে করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে তা জমাও দেওয়া হয়।”
একই সুরে আরেক পরিচালক এনামুল হক বলেন, “চেম্বার কখনো দলীয়করণে চলে না। তবে ভবিষ্যৎ কার্যক্রম কবে শুরু হবে, সেটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”
চেম্বারের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, চলমান এই অচলাবস্থা কাটিয়ে কার্যকর চেম্বার কমিটি গঠন এবং নিয়মিত কার্যক্রম শুরু না হলে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।