Home First Lead গাজামুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটক, জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ

গাজামুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটক, জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ

“সুইডিশ কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং ব্রাজিলিয়ান কর্মী থিয়াগো অ্যাভিলা গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি জাহাজে বসে রয়েছেন।”
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে ইউরোপ থেকে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা অবশেষে ইসরায়েলি বাধার মুখে পড়েছে। শনিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ডজনখানেক জাহাজ থামিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী এবং শতাধিক কর্মীকে আটক করে আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে প্রায় চল্লিশটি দেশের নাগরিক, যাদের মধ্যে আইনজীবী, চিকিৎসক, শিল্পী, সংসদ সদস্য ও মানবাধিকার কর্মীও আছেন।

কে আয়োজন করেছে

বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সুমুদ নুসান্তারা—এই চারটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ সংগঠিত হয়। আয়োজকরা বলেন, এটি কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকারের নয়, বরং সাধারণ নাগরিকদের মানবিক উদ্যোগ।

উদ্দেশ্য

বহরের লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধ ভেঙে গাজায় প্রতীকী মানবিক করিডোর স্থাপন করা। বহরে নেওয়া হয়েছিল চিকিৎসা সরঞ্জাম, শুকনো খাবার, শিশুদের জন্য দুধ ও খাবার, পানিশোধক ট্যাবলেটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। আয়োজকদের মতে, এটি ছিল নিছক মানবিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ এবং অবরুদ্ধ জনগণের পাশে থাকার প্রতীকী প্রচেষ্টা।

যাত্রা ও সম্ভাব্য পৌঁছার সময়

বহরটি গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করে সেপ্টেম্বরের শেষ বা অক্টোবরের শুরুতে গাজা উপকূলে পৌঁছানোর কথা ছিল। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ভ্রমণের পর বহরটি যখন গাজার উপকূল থেকে ৫০–৬০ কিলোমিটার দূরে আসে, তখনই ইসরায়েলি বাহিনী হস্তক্ষেপ করে।

বাধা-বিপত্তি

ইসরায়েলি নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঢুকে একাধিক জাহাজ থামায়। অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেছেন, বোর্ডিং অভিযানে পানির জেট, স্টান গ্রেনেডসহ জোরপূর্বক কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও আয়োজকরা দাবি করেছেন, তাদের বহরে কোনো অস্ত্র বা সামরিক সরঞ্জাম ছিল না। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, এ অভিযান তাদের জাতীয় নিরাপত্তার অংশ এবং গাজায় অস্ত্র পৌঁছানো রোধে এটি প্রয়োজনীয়।

সবশেষ আপডেট

সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্র বলছে, প্রায় ৪০টি জাহাজের মধ্যে বেশিরভাগ আটক হয়েছে। তবে অন্তত একটি জাহাজ গাজার আঞ্চলিক জলসীমায় প্রবেশ করতে পেরেছে বলে খবর পাওয়া গেছে, যদিও তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। আটককৃতদের সবাইকে আশদোদ বন্দরে নেওয়া হচ্ছে এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় তদন্ত চালানো হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর (OHCHR) জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ ধরনের অভিযান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) বলেছে, ফ্লোটিলা আটক করার মাধ্যমে গাজায় মানবিক করিডোরের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হলো। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন দেশও। স্পেন, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কলম্বিয়াসহ একাধিক সরকার তাদের নাগরিক আটক হওয়ায় কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

২০১০ সালের মাভি মারমারা ঘটনার পর ফের একই ধরনের বিতর্ক তৈরি হলো। মানবিক সহায়তা বহর আটক করা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলকে নতুন করে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ঘটনায় একদিকে মানবিক করিডোরের দাবি আরও জোরালো হবে, অন্যদিকে ইসরায়েলি নীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত ও মানবাধিকার সংস্থার সামনে নতুন করে প্রশ্ন উঠবে।