রামেশ ভট্টরায়, কাঠমান্ডু: নেপালের পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে জেন জি (Gen Z) গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের মধ্যে এক ভার্চুয়াল বৈঠকের পর দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫,০০০ অংশগ্রহণকারীর মধ্যে হওয়া এই বিতর্কে কার্কির নাম সর্বাধিক সমর্থন লাভ করে। তবে, এই সিদ্ধান্তে কাঠমান্ডুর বর্তমান মেয়র বলেন্দ্র শাহের নাম আলোচনার বাইরে চলে যাওয়ায় কিছুটা নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে, কাঠমান্ডুর জনপ্রিয় মেয়র বলেন্দ্র শাহকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। কিন্তু স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও শাহ কোনো ইতিবাচক সাড়া দেননি। জেন জি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, “যেহেতু তিনি আমাদের ফোন ধরেননি, আলোচনা অন্য নামে চলে গেছে।” এই পরিস্থিতিতে সুশীলা কার্কি প্রধান পছন্দ হিসেবে উঠে আসেন।
জানা গেছে, কার্কির কাছে এই প্রস্তাব পাঠানোর পর তিনি কমপক্ষে ১,০০০ জনের লিখিত স্বাক্ষর চেয়েছিলেন সমর্থন প্রদর্শনের জন্য। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তিনি ইতিমধ্যেই ২,৫০০ জনেরও বেশি স্বাক্ষর পেয়েছেন, যা তার প্রতি তরুণ প্রজন্মের শক্তিশালী সমর্থনকে নির্দেশ করে।
তবে, বৈঠকে শুধুমাত্র সুশীলা কার্কিই নন, আরও কয়েকটি নাম আলোচনায় আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের প্রধান কুলমান ঘিসিং, যুব নেতা সাগর ঢাকাল, এবং ধারানের মেয়র হারকা সাম্পাং। এই নামগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, তরুণ প্রজন্ম শুধুমাত্র রাজনৈতিক ঐতিহ্য থেকে নয়, বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদেরও দেশের নেতৃত্ব দিতে দেখতে চায়।
বিশ্লেষকদের মতে, জেন জি-র এই উদ্যোগ নেপালের রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং নতুন নেতৃত্ব খোঁজার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। সুশীলা কার্কি, দেশের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে, একটি শক্তিশালী এবং সংস্কারপন্থী ভাবমূর্তি বহন করেন, যা তরুণ প্রজন্মের কাছে আবেদনময়।
তবে, এই প্রক্রিয়া একটি বড় অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। জেন জি চাইলেও, সেনা কর্তৃপক্ষ সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেবে কিনা, তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই প্রশ্নটি নেপালের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিনের আলোচনার পুনরুত্থাপন ঘটিয়েছে। এই মুহূর্তে সকল চোখ কাঠমান্ডুর উপর, যেখানে তরুণ প্রজন্মের আশা এবং বাস্তবতার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য তৈরির চেষ্টা চলছে।