Home Third Lead স্কুল ড্রেস পরে পালানো সেই ‘খুনি’ পুলিশের জালে!

স্কুল ড্রেস পরে পালানো সেই ‘খুনি’ পুলিশের জালে!

ছবি: সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বিশ্বাস করে যাকে ঘরের চাবি দিয়েছিলেন, সেই গৃহকর্মীই যে সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে উঠবে,  তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি শিক্ষক আজিজুল ইসলাম। মাত্র ৪ দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মী আয়েশা ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে মা ও মেয়েকে। শুধু খুনই নয়, পালানোর সময় নিজের পরিচয় লুকাতে মৃত কিশোরী মেয়েটির স্কুল ড্রেস পরেই সটান বেরিয়ে যায় সে! অবশেষে ৪৮ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর বরিশালের ঝালকাঠি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই পৈশাচিক নারী আয়েশাকে।

কোথায়, কীভাবে ধরা পড়ল আয়েশা?
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল আয়েশা। মোবাইল বন্ধ, ঠিকানা ভুয়া। কিন্তু প্রযুক্তির জালের কাছে হার মানতে হলো তাকে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের একটি বিশেষ টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঝালকাঠিতে অভিযান চালায়। সেখান থেকেই তাকে হাতকড়া পরানো হয়। মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “আয়েশাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই জানা যাবে এই নৃশংসতার আসল কারণ।”

সেদিন সকালে যা ঘটেছিল ‘মৃত্যূপুরীতে’:
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল। মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের সপ্তম তলার ফ্ল্যাট। গৃহকর্তা আজিজুল ইসলাম (সানবিমস স্কুলের শিক্ষক) সকাল ৭টায় বেরিয়ে যান কর্মস্থলে। বাসায় ছিলেন স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও দশম পড়ুয়া মেয়ে নাফিসা (১৫)।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বাসায় ঢোকে গৃহকর্মী আয়েশা। এরপর দেড় ঘণ্টার ‘অপারেশন সাইলেন্স’। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হয় সে। কিন্তু তখন তার পরনে ছিল না গৃহকর্মীর পোশাক। সে পরেছিল মৃত নাফিসার স্কুল ড্রেস! সঙ্গে নিয়ে যায় ল্যাপটপ, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার আর নগদ টাকা।

বাবার বুকফাটা আর্তনাদ:
অফিস থেকে স্ত্রীকে বারবার ফোন দিয়েও পাচ্ছিলেন না আজিজুল ইসলাম। বুকটা ছাঁত করে ওঠে। বেলা ১১টায় তড়িঘড়ি করে বাসায় ফিরে দেখেন, সব শেষ! স্ত্রীর রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে আছে ঘরের ভেতরে। আর আদরের মেয়ে নাফিসা? গলার নিচে গভীর ক্ষত নিয়ে মেইন গেটের কাছে পড়ে ছটফট করছে— যেন বাঁচার জন্য শেষ চেষ্টাটুকু করেছিল সে! বাবার চোখের সামনেই হাসপাতালে নেওয়ার পথে নিভে যায় মেয়েটার প্রাণপ্রদীপ।

পুলিশ কী বলছে?
এই ঘটনা পরিকল্পিত, নাকি চুরির উদ্দেশ্যেই খুন— তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে মাত্র ৪ দিনের মাথায় এমন নৃশংসতা দেখে তদন্তকারীরাও হতবাক। আয়েশাকে ঢাকায় এনে রিমান্ডে নিলেই বেরিয়ে আসবে আসল রহস্য। একাই কি সে এই কাজ করেছে, নাকি এর পেছনে আরও কেউ আছে?