বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। দ্বীপে পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিত করতে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রণালয়, যেখানে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু বাধ্যতামূলক নিয়ম ও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ও পরিবেশগত পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২০ অনুযায়ী জারিকৃত এই প্রজ্ঞাপন (নং-২২.০০.০০০০.০৭৩.১৪.০২৪.২০.০৩৪) আগামী নভেম্বর থেকেই কার্যকর হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে নতুন কোনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না।
পর্যটকদের জন্য নতুন নিয়মাবলী
টিকিটিং ও প্রবেশাধিকার:
দ্বীপে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড অনুমোদিত ভ্রমণ অপারেটরের মাধ্যমে স্মার্টকার্ড বা অনলাইন টিকিট ক্রয় করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ‘ট্রাভেল পাস’ ও কিউআর কোড থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
দিনের বেলা ভ্রমণ:
নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে শুধুমাত্র দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি থাকবে। রাতের বেলায় দ্বীপে অবস্থান আইনত দণ্ডনীয় হবে।
পর্যটকের সংখ্যা সীমিত:
প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২,০০০ জনের বেশি পর্যটক দ্বীপে প্রবেশ করতে পারবে না।
অবস্থানকাল:
কোনো পর্যটক এক দিনের বেশি দ্বীপে থাকতে পারবে না।
বিদ্যুৎ ও শব্দ নিয়ন্ত্রণ:
রাত ১০টার পর অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা, উচ্চ শব্দ, গান-বাজনা বা বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ক্যাম্পিং নিষিদ্ধ:
কেয়া বনে প্রবেশ করা, কেয়া ফল সংগ্রহ বা কেনাবেচা করা যাবে না।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ:
সামুদ্রিক কচ্ছপ, প্রবাল, ঝিনুক, শামুক, রাজকাঁকড়া, সামুদ্রিক ঘাস, শৈবাল, পাখি বা অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
যান্ত্রিক যানবাহন নিষিদ্ধ:
সমুদ্র সৈকতে মোটরসাইকেল, সিএনজি বা যেকোনো যান্ত্রিক যান চলবে না।
প্লাস্টিক ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ:
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের গ্লাস, চামচ, বোতল ইত্যাদি বহন নিষিদ্ধ। এমনকি ৫০০ মি.লি. বা ১০০০ মি.লি. প্লাস্টিকের পানির বোতলও নেওয়া যাবে না।
টেকসই পর্যটনের পথে নতুন পদক্ষেপ
মন্ত্রণালয় জানায়, এই নির্দেশনার মূল লক্ষ্য হলো দ্বীপের নাজুক সামুদ্রিক ও প্রবাল পরিবেশকে রক্ষা করা এবং পর্যটনকে একটি দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
পর্যটকদের নিজস্ব পানির বোতল সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং দ্বীপে অবস্থানকালে সব পরিবেশগত নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন তার নীল জলরাশি, প্রবাল প্রাচীর ও বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই আকর্ষণের কেন্দ্র। তবে অতিরিক্ত ভ্রমণচাপ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা দ্বীপটির পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার আশা করছে, সেন্টমার্টিন আবারও একটি সুরক্ষিত ও টেকসই পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হবে।