বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: পহেলগামের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ভারতের নেওয়া কড়া কূটনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপের জেরে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ ও ভারতের রাজস্থানে ছড়িয়ে থাকা সোধা হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাব্দীপ্রাচীন পারস্পরিক বিবাহপ্রথা।
বহু দশক ধরে একই গোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ থাকার হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে সিন্ধের সোধা পরিবারগুলো পশ্চিম ভারতের রাজস্থানে ছেলের-মেয়ের বিবাহের জন্য নির্ভর করে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তন এ বন্ধনে টানাপোড়েন তৈরি করেছে।
রাজস্থানে বসবাসরত রাম সিংহ সোধা জানান, “একই গোত্রে বিয়ে নিষিদ্ধ বলে আমাদের মেয়েদের জন্য পাকিস্তানের সিন্ধে কোনো পাত্র থাকে না। রাজস্থানের সোধা পরিবারগুলিই একমাত্র ভরসা। আমি নিজেও জোধপুরে বিয়ে করেছি।”
রাম সিংহ ১৯ বছর আগে ভারত চলে আসেন এবং পাঁচ বছর আগে নাগরিকত্ব পান। তার মতো আরও অনেকেই একই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছেন। ২০০৭ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ভারত অভিমুখে পাড়ি জমান মদন সিংহ সোধা। এখন তিনি ভারতের নাগরিক, এবং বিয়ে করেছেন জয়পুরে। তাঁর মতে, “ভারতে নিরাপত্তা, শিক্ষা, ও গণতন্ত্র আছে। পাকিস্তানে এসব কল্পনাও করা যায় না।”
অন্যদিকে, অনোয়ার সিংহ সোধা বলেন, “পাকিস্তানে কেবলমাত্র একটি গ্রামেই প্রায় ২০০টি সিসোদিয়া গোত্রের পরিবার বাস করে, যাদের সঙ্গে আমাদের বিবাহ হতে পারে। কিন্তু সেটাও খুবই দুর্লভ।” ফলে ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ বিয়ের পথ।
পহেলগাম হামলার পর ভারত সরকার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পাকিস্তানি কূটনৈতিকদের বহিষ্কার, আটারির চেকপোস্ট বন্ধ, এবং ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের প্রত্যাহারসহ পাঁচটি কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, “SVES (SAARC Visa Exemption Scheme) আওতায় দেওয়া ভিসাগুলি বাতিল করা হয়েছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” অনেকেই যারা বিয়ে করে ভারতবাসী হয়ে উঠেছিলেন, তারা এখন বিতাড়নের মুখে।
‘সন্ত্রাস একদিন পাকিস্তানকে টুকরো টুকরো করে দেবে’
হিন্দু সিংহ সোধা, যিনি এ সম্প্রদায়ের অভিবাসী পরিবারের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, বলেন, “সিন্ধের মেঘওয়াল, ভিলদের মতো দরিদ্র হিন্দু জাতিগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রের তরফে কোনো স্বীকৃতি বা সুরক্ষা নেই। অনেকেই আজও বন্ডেড লেবার।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “সন্ত্রাসবাদের এই ধারায় একদিন পাকিস্তান নিজেই টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।”
ঐতিহ্য বনাম রাষ্ট্রনীতি
শুধু রাজনৈতিক উত্তেজনাই নয়, এই সংকটে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, ঐতিহ্য ও মানবিক মূল্যবোধের উপরও আঘাত এসেছে। সীমান্তের কাঁটাতারে আটকে পড়েছে শতাব্দীপ্রাচীন এক সমাজিক বন্ধন—যেখানে ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে মিলেছে মানবিক প্রয়োজন। সোধা সম্প্রদায় এখন প্রশ্ন করছে—কীভাবে তারা ধরে রাখবে এই রীতি, যখন রাষ্ট্রীয় নীতিতে ভেঙে পড়ছে সম্পর্কের সেতু?