Home দিল্লি কেরালার মন্দিরে সোনা গায়েব, ২৫ কোটি টাকার গরমিল

কেরালার মন্দিরে সোনা গায়েব, ২৫ কোটি টাকার গরমিল

সংগৃহীত ছবি
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ভারতের কেরালার সবরীমালা মন্দিরে সোনা চুরির ঘটনায় আদালত নিযুক্ত বিশেষ তদন্ত দলের অনুসন্ধান চলার মধ্যে এবার গুরুবায়ূর শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরেও মিলেছে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ। সরকারি নিরীক্ষায় মন্দিরের বিপুল পরিমাণ সোনা ও রুপার হিসাব মেলেনি।

সরকারি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুরুবায়ূর দেবস্বমের ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাবে বিপুল গরমিল পাওয়া গেছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ সোনা-রুপার মতো দামী উপকরণের সঠিক তালিকা রাখেনি বা যাচাই করেনি। এমনকি আয়-ব্যয়ের খাতায়ও বড় ধরনের অসংগতি দেখা গেছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালের জুলাইয়ের পর থেকে গুরুবায়ূর দেবস্বম কমিটির সিদ্ধান্তগুলো আর অডিটের জন্য খোলা রাখা হয়নি। ২০১৫ সালে কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে তাদের সিদ্ধান্তগুলো আর নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটভিত্তিক আয় ও প্রকৃত আয়-ব্যয়ের মধ্যে বিপুল পার্থক্য ধরা পড়ে। বিনিয়োগ, দান, মূলধনী আয় ও কর খাতে হিসাবের মধ্যে গরমিল পাওয়া যায়।

নিয়ম অনুযায়ী গুরুবায়ূর দেবস্বম প্রশাসককে মন্দিরের সব দামী উপকরণের তালিকা তৈরি করে প্রতিবছর সেগুলো যাচাই করে দেবস্বম কমিশনারের কাছে জমা দিতে হয়। কিন্তু ১৯৮০ সাল থেকে প্রণীত এই নিয়ম আজ পর্যন্ত কখনোই পালন করা হয়নি।

২০১৯ সালে কর্মকর্তারা সোনার উপকরণের নথি চাইলে দেবস্বম তা সরবরাহ করেনি। নিরীক্ষায় আরও বলা হয়, দাতাদের দেয়া উপকরণের রসিদও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি—সোনা ও রুপা ছাড়া অন্য কিছুর কোনো রসিদই দেয়া হয়নি।

২০২০–২১ সালের নিরীক্ষায় দেখা যায়, মন্দিরের মোট আয় থেকে ব্যয় প্রায় ২৫ কোটি রুপি বেশি হয়েছে। আয়-ব্যয়ের এই পার্থক্য ২০১৬–১৭ সালের পর আর দেখা যায়নি। যদিও করোনাকালে আয় কমার যুক্তি দেখানো হয়েছে, নিরীক্ষকরা সতর্ক করেছেন যে, আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বাড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

সবরীমালায় সোনার রহস্য

গুরুবায়ূরের এই অনুসন্ধান সামনে আসে যখন সবরীমালা মন্দিরে সোনার গায়েব হওয়া নিয়ে বড় বিতর্ক চলছে।

ঘটনার সূত্রপাত ১০ সেপ্টেম্বর, যখন সবরীমালার স্পেশাল কমিশনার হাইকোর্টকে জানান, মন্দিরের দ্বাররক্ষক ও পীঠমণ্ডপের সোনার আবরণ সংস্কারের নামে খুলে নেওয়া হয়েছে, অথচ তাকে জানানো হয়নি। আদালত জানতে পারে, ২০১৯ সালের সংস্কারের সময় ফেরত আসা উপকরণের ওজনেও পার্থক্য ছিল।

৬ অক্টোবর কেরালা হাইকোর্ট এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দেয়। দেখা যায়, ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ড ২০১৯ সালে সংস্কারের সময় যেসব জিনিস পাঠানো হয়েছিল, সেগুলোকে রেকর্ডে ‘তামার পাত’ হিসেবে দেখানো হয়, যদিও ১৯৯৯ সালে সেগুলোতে ১.৫ কেজি সোনা ব্যবহার করা হয়েছিল।

আদালত জানতে চায়—কেন সোনাকে তামা হিসেবে রেকর্ড করা হলো, কেন মূল্যবান উপকরণ একজন অবিশ্বস্ত ‘স্পনসর’-এর হাতে তুলে দেয়া হলো এবং কেন সঠিক নথিপত্র রাখা হয়নি।

এর পর আদালত প্রাক্তন বিচারপতি কে. টি. শংকরণকে নিযুক্ত করে সবরীমালা মন্দিরের সব সোনার উপকরণের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার নির্দেশ দেয়।

সন্দেহজনক সংস্কার কাজ ও গ্রেপ্তার

ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান বিজয় মালিয়া ১৯৯৮ সালে সবরীমালা মন্দিরে ৩০.২৯১ কেজি সোনা দান করেছিলেন। এর মধ্যে ১.৫৬৪ কেজি সোনা ব্যবহার করা হয় দ্বাররক্ষক মূর্তি অলংকরণে।

২০১৯ সালে এসব সোনার পাত সংস্কারের নামে তুলে দেয়া হয় বেঙ্গালুরুভিত্তিক ব্যবসায়ী উণ্ণিকৃষ্ণন পোত্তির কাছে। তিনি দাবি করেন, নতুন সোনার আবরণ স্পনসর করবেন এবং তা চেন্নাইয়ের স্মার্ট ক্রিয়েশন্সে পাঠাবেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এসব সংস্কার কাজ মন্দির প্রাঙ্গণেই করার কথা ছিল।

ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ডের রেকর্ডে সোনার পাতগুলোকে দেখানো হয় ৪২.৮ কেজি ওজনের ১২টি তামার পাত হিসেবে। ফেরত আসার সময় ওজন দাঁড়ায় ৩৮.২৫৮ কেজি—অর্থাৎ ৪.৫৪১ কেজি কম, তবুও কেউ প্রশ্ন তোলেনি।

২০২৫ সালেও উণ্ণিকৃষ্ণনকে আবার সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া হয়, যতক্ষণ না হাইকোর্ট তা স্থগিত করে। আদালত জানতে চায়—২০১৯ সালের কাজের ৪০ বছরের গ্যারান্টি থাকা সত্ত্বেও আবার সংস্কারের প্রয়োজন কেন।

পরবর্তীতে তদন্তে জানা যায়, হারানো সোনার কিছু অংশ উণ্ণিকৃষ্ণনের বোন মিনি’র বাড়িতে রাখা ছিল। তিনি স্বীকার করেন, তার ভাই নিজেই এসব সেখানে রেখেছিলেন।

২৩ অক্টোবর বিশেষ তদন্ত দল সবরীমালার প্রাক্তন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুরারী বাবুকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ২০১৯ ও ২০২৫ দুইবারই সোনার পাতগুলোকে “তামা” হিসেবে রেকর্ড করেছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, বিজয় মালিয়ার দানকৃত সোনা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনাতেই এই পুরো প্রক্রিয়া সাজানো হয়েছিল।