বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোম’র শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসে এক শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ রেখেও শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে তাদের দাবিসমূহ উপস্থাপন করেন। এ সময় বেশ কয়েকজন অভিভাবকও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
বিক্ষোভকারীরা প্রধানত উপাধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষকের অপসারণের দাবি তুলেছেন। এছাড়া পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদের উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দাবির মধ্যে রয়েছে – আজমান আহমেদ দানিয়াল ও তার পরিবারের সঙ্গে অবমাননাকর আচরণের জন্য উপাধ্যক্ষ হোসেন চৌধুরী এবং শ্রেণী শিক্ষক শামীম হোসেনকে অপসারণ করা, শিক্ষার্থীদের কোনো ব্যক্তিগত হেনস্থা বন্ধ করা এবং পরীক্ষা কমিটির রুটিন তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া।
গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমান আহমেদ দানিয়াল (১৯) নিজ বাসা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে এ বিষয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আজমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা এবং তাদের অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষক নেই, এবং শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়লে ছাড়পত্র দিয়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।
আজমানের মা অভিযোগ করেছেন, প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করায় তার সন্তানের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ অপমানজনক আচরণ করেছে এবং অভিভাবকদের ডেকে এনে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবাদ জানাতে আগে থেকেই রোববার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। যদিও শনিবার স্কলার্সহোম কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রোববার সব শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে শিক্ষার্থীরা নির্দেশনা অমান্য করে সকালের দিকে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন। প্রথমে ফটক বন্ধ রাখলেও পরে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে ফটক খুলে দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে স্লোগান দিতে শুরু করেন এবং আজমানের মৃত্যুর সুষ্ঠ তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান।
বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাদের পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। অনেক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আজমানের মৃত্যুর জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে এবং তাদের খারাপ আচরণের কারণে আজমানের মৃত্যু হয়েছে। তারা দাবি করেছেন, এ ঘটনার দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এই প্রসঙ্গে শাহী ঈদগাহ শাখার অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মুনীর আহমেদ কাদেরী (অব.) বলেন, “শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি করেছেন। আমরা এসব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে, শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত তাদের দাবির পূর্ণতা না হলে তারা পুনরায় আন্দোলনে নামবেন।