বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশুদের ‘স্ক্রিন টাইম’। মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা ট্যাবলেট এখন অনেক পরিবারের নিত্যসঙ্গী। পড়াশোনা থেকে শুরু করে বিনোদন—সবকিছুতেই ডিজিটাল পর্দার ব্যবহার যেন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই নির্ভরতা যেমন শিশুদের সহজ তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ দিয়েছে, তেমনি কমিয়ে দিচ্ছে তাদের মনোযোগ ও একাগ্রতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের একটি বড় অংশ যদি মোবাইল বা ট্যাবলেটের পর্দায় কাটে, তাহলে শিশুদের মনোসংযোগের ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। পড়াশোনার সময়ও তারা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এ কারণে শিশুর মানসিক বিকাশে ভারসাম্য রক্ষায় অভিভাবকদের ভূমিকা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, পড়াশোনার বাইরে শিশুদের স্ক্রিন টাইম যতটা সম্ভব সীমিত করা প্রয়োজন। অনেক সময় পরিবারের বড়রা টেলিভিশন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করলে শিশুরাও আকৃষ্ট হয় এবং তাদের ভাষা ও আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। তাই শিক্ষামূলক অ্যাপ বা কার্টুন ছাড়া অন্য কাজে যেন তারা ডিজিটাল পর্দায় সময় না দেয়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরি।
মনোযোগ ধরে রাখতে শরীরচর্চা শিশুদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দিনে অন্তত এক ঘণ্টা খেলাধুলো শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। কিন্তু যারা সারাক্ষণ মোবাইলে ডুবে থাকে, তারা ধীরে ধীরে বাইরের খেলাধুলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুমও একাগ্রতা বৃদ্ধির অন্যতম শর্ত। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সি শিশুদের প্রতিদিন ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের কারণে অনেক শিশু ঘুমের অভাবে ভোগে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুললে স্ক্রিনে কাটানো সময়ও কমে আসবে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, পারিবারিক নজরদারি ও নিয়মকানুন শিশুদের এই আসক্তি কমাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন পড়ার সময় মোবাইল বন্ধ রাখা, ঘুমের ঘরে টিভি বা ট্যাব নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি ছোট ছোট পদক্ষেপও কার্যকর হতে পারে।
সবশেষে, সামাজিক মেলামেশা শিশুদের মানসিক ও বুদ্ধিবিকাশে বড় ভূমিকা রাখে। তাই তারা যদি বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটায়, খেলাধুলো, আঁকাআঁকি বা লেখালেখির মতো শখে মন দেয়, তাহলে তাদের একাগ্রতাও বাড়বে।
অভিভাবকদের সচেতনতা, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও বিকল্প আনন্দের সুযোগ সৃষ্টি—এই তিনটি বিষয়েই রয়েছে শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশ ও মনোযোগ ধরে রাখার চাবিকাঠি।