বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ভারত হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে প্রস্তুত পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও ফলমূলসহ অন্তত সাতটি পণ্যের স্থলবন্দরপথে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) ১৭ মে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানায়।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রস্তুত পোশাক এখন থেকে শুধু কলকাতা ও মুম্বাইয়ের সমুদ্রবন্দর দিয়েই ভারতে প্রবেশ করতে পারবে, কোনো স্থলবন্দর দিয়ে নয়। আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের কোনো ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) কিংবা ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের অনুমতি থাকবে না।
প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা নেপাল ও ভুটানের উদ্দেশ্যে যাওয়া ট্রানজিট পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এছাড়া মাছ, তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), ভোজ্যতেল এবং পাথরজাত পণ্য নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে।
নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রয়েছে: তৈরি পোশাক, ফল ও ফল-স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বনেটেড বেভারেজ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য,তুলা ও তুলা-আবর্জনা, প্লাস্টিক ও পিভিসি পণ্যকাঠের তৈরি আসবাবপত্র।
গত ৯ এপ্রিল ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রানজিট সুবিধাও বাতিল করে। বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে পণ্য রপ্তানিতে এই সুবিধা ব্যবহার হতো।
বাংলাদেশ স্থলবন্দরপথে ভারতীয় সুতা আমদানি বন্ধ করে দেয়। এই নিষেধাজ্ঞা আসে ১৫ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের দাবির পর। তারা অভিযোগ করেছিল ভারত থেকে সুতা আমদানিকারকরা পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করছে। ফলে দেশীয় সুতা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে পোশাক প্রস্তুতকারকরা এর বিরোধিতা করে আসছেন।
ভারতে আমাদের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক ও আসবাবপত্রের বড় বাজার রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা আমাদের এসব পণ্য রপ্তানি খাতের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারত থেকে প্রায় ৭৫ শতাংশ সুতা আসে সমুদ্রপথে। অর্থাৎ স্থলপথে নিষেধাজ্ঞার পরও আমদানি পুরোপুরি থেমে যায়নি।
গার্মেন্টস রপ্তানিকারকরা মনে করেন, স্থলবন্দরের পরিবর্তে সমুদ্রপথে রপ্তানি করতে হলে খরচ বাড়বে, সময়ও লাগবে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য ভারত থেকে আমদানি করে এবং রফতানি করে মাত্র ১৫৬ কোটি ডলারের পণ্য। ২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। আর রপ্তানি করেছে মাত্র ১.৫৬ বিলিয়ন ডলারের। বাণিজ্য ভারসাম্য না থাকায় এই ধরনের বাধা আরও সংকট তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “পোশাক খাতে তেমন প্রভাব না পড়লেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য ও অন্যান্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই ধরনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”