বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, শরীয়তপুর: মাত্র ১৩ বছর বয়স। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ ছামীমের চোখে ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। বড় হয়ে চিকিৎসক হবে এই ছিল তার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সেই স্বপ্নের বীজ রোপণের আগেই সময়ের এক নিষ্ঠুর ঘূর্ণিতে নিভে গেল ছোট্ট প্রাণটি। উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আগুনে পুড়ে মারা গেছে এই খুদে শিক্ষার্থী।
সোমবার (২১ জুলাই) রাতে বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হার মেনে নেয় আব্দুল্লাহ। আর মঙ্গলবার সকালে গ্রামের মাটিতে শায়িত হয় সে, যেখানে কিছুদিন আগেই শায়িত হন তার প্রবাসী বাবা আবুল কালাম মাঝি।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার ডিএমখালী ইউনিয়নের সন্তান আব্দুল্লাহ। বাবা ছিলেন মালয়েশিয়ায়। সাত মাস আগে হৃদরোগে মারা যান তিনি। বাবার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই মায়ের কোল খালি করে দিল ছোট্ট ছেলেটিও।
এদিকে, আব্দুল্লাহর লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর বিষাদের ছায়া নেমে আসে পুরো এলাকায়। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, সহপাঠী—সবাই কেঁদেছে এক শিশুর অসমাপ্ত স্বপ্নের জন্য। ডিএমখালী চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ভাঙা কণ্ঠে আব্দুল্লাহর মা জুলেখা বেগম বলেন,
“বিমান বিধ্বস্তের পর ছেলেকে আর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে বার্ন ইনস্টিটিউটে পাই। তখনও ছেলের মুখে কথা ছিল। পানি চেয়েছিল। বলছিল ‘আম্মু, আমাকে বিদেশে নিয়ে যাও। এখানে চিকিৎসা হবে না।’ আমি শুধু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিছু বলতে পারিনি। কিছু করতে পারিনি…।”
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
“ছেলের অনেক স্বপ্ন ছিল। চিকিৎসক হবে বলত। স্কুল থেকে এসে বাবার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলত ‘বাবা, আমি তোমার মতো বিদেশে যাব না। আমি দেশের মানুষের সেবা করব।’ সেই ছেলেকে আগুনে পুড়ে যেতে হলো… আমি আর কত হারাব?”
সন্তান হারানোর ব্যথার সঙ্গে প্রশ্নও তুলেছেন জুলেখা বেগম—
“এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কেন প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ওড়ানো হবে? এটা দুর্ঘটনা, না কি অন্য কিছু? আমি বিচার চাই। এ দুর্ঘটনার পেছনে যদি কোনো গাফিলতি বা ষড়যন্ত্র থাকে, তাহলে দায়ীদের যেন কঠিন শাস্তি হয়।”