Home Second Lead বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ৩,০০০ ডলারের নিচে নামতে পারে, বিনিয়োগকারীদের সতর্কবার্তা

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ৩,০০০ ডলারের নিচে নামতে পারে, বিনিয়োগকারীদের সতর্কবার্তা

আমিরুল মোমেনিন: রেকর্ড উচ্চতা ছোঁয়ার পর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম হঠাৎ করেই লাফিয়ে লাফিয়ে কমতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ, যা গত এক দশকের মধ্যে অন্যতম বড় পতন বলে জানিয়েছে বাজার বিশ্লেষকরা।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শক্তিশালী মার্কিন ডলার, সুদের হারের স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আশাবাদই এই পতনের মূল কারণ। ২০২৫ সালের অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে প্রতি ট্রয় আউন্স স্বর্ণের দাম ৪,০০০ ডলার অতিক্রম করেছিল, কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা নেমে এসেছে প্রায় ৩,৬৫০ ডলারে।

কেন কমছে স্বর্ণের দাম

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য-সম্পর্কের উন্নতি এবং বৈশ্বিক বাজারে ‘রিস্ক-অন’ মনোভাবের কারণে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। একইসঙ্গে মার্কিন ডলার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখায় স্বর্ণের আন্তর্জাতিক মূল্যে চাপ পড়েছে।

বিজনেস ইনসাইডার তাদের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে, বিনিয়োগকারীরা এখন লাভ তুলে নিচ্ছেন,  কারণ গত কয়েক মাসে স্বর্ণের দামে দ্রুত উল্লম্ফন ঘটেছিল। ফলে এখন বাজারে বড় ধরনের বিক্রির চাপ দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, সিটিব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দাম ৩,০০০ ডলারের নিচে নামতে পারে। ব্যাংকটির মতে, স্বর্ণের চাহিদা হ্রাস, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ ক্রয়ে ধীরগতি এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী মনোভাবই এই পতনের পেছনে কাজ করছে।

বাজারের পরিস্থিতি

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এক দিনে স্বর্ণের দাম কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতি আউন্সে প্রায় ৩৫০ ডলার পর্যন্ত পতন হয়েছে। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, স্বর্ণের গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট লেভেল এখন ৩,৫০০ ডলারে, আর রেজিস্ট্যান্স লেভেল ৩,৯০০ ডলার।

Finance Magnates বিশ্লেষণ করেছে যে, এই পতন যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে দাম আরও ১৭ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। অর্থাৎ, স্বর্ণ ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ৩,০০০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।

স্থানীয় প্রভাব

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারের এই পতনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক দাম কমায় স্থানীয় বাজারে জুয়েলারি স্বর্ণের দরে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে পারে। তবে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস) জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে কর ও ডলারের দামের প্রভাবে তাৎক্ষণিক বড় পরিবর্তন দেখা না গেলেও, আন্তর্জাতিক ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই দাম সমন্বয় করা হতে পারে।

বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে স্বর্ণবাজারে অতি উত্তেজনা ও ঝুঁকি দুই-ই বিদ্যমান। যাঁরা সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চ দামে স্বর্ণ কিনেছেন, তাঁদের জন্য বড় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকদের পরামর্শ—এখনই নতুন বিনিয়োগের সময় নয়। বাজারে বড় ধাক্কার পর স্বর্ণের দাম স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

বিশ্লেষক সংস্থা Capital Economics জানায়, “Safe haven” সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের আকর্ষণ কিছুটা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বাজারে প্রযুক্তিখাতে প্রবল ইতিবাচক ধারা স্বর্ণের চাহিদাকে নিচে টেনে ধরছে।

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

তবে বিশ্লেষকদের একাংশ এখনো আশাবাদী। তাঁদের মতে, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বা মুদ্রাস্ফীতির পুনরুত্থান ঘটলে আবারও স্বর্ণের দিকে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে দামে নতুন করে উত্থান ঘটার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম যে গতিতে বেড়েছিল, এখন প্রায় একই গতিতে তা কমছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি স্পষ্ট বার্তা—স্বর্ণের বাজার এখন অত্যন্ত অস্থির। ফলে হঠাৎ করে লাফিয়ে পড়া নয়, বরং বাজারের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে ধীরে-সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত হবে।