Home আন্তর্জাতিক হংকংয়ে বহুতলে অগ্নিকাণ্ড: নিহত ৪৪, নিখোঁজ তিন শতাধিক

হংকংয়ে বহুতলে অগ্নিকাণ্ড: নিহত ৪৪, নিখোঁজ তিন শতাধিক

সংগৃহীত ছবি

 নরহত্যার অভিযোগে ৩ জন গ্রেপ্তার 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হংকংয়ের তাই পো জেলায় বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। বাঁশের মাচা (bamboo scaffolding) দিয়ে ঘেরা প্রায় ২,০০০ ফ্ল্যাটের একটি বিশাল আবাসিক কম্পাউন্ডে এই আগুন ছড়িয়ে পড়লে বহু মানুষ ভেতরে আটকা পড়েন। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৭৯ জন বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ৪০ জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এবং বাকি ৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহতদের মধ্যে হো ওয়াই-হো নামের একজন দমকলকর্মীও রয়েছেন। এছাড়া আরও ৪৫ জন গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আগুন ও উদ্ধার তৎপরতা
বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, ১০ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। পুরো এলাকার আকাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে ‘ফাইভ-অ্যালার্ম ফায়ার’ বা সর্বোচ্চ জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছে। গত দুই দশকের মধ্যে এই প্রথম হংকংয়ে আগুনের ঘটনায় সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা জারি করা হলো। ঘটনাস্থলে অন্তত ১২৮টি ফায়ার ইঞ্জিন এবং প্রায় ৮০০ দমকলকর্মী উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

গ্রেফতার ও তদন্ত
হংকং পুলিশ জানিয়েছে, অনিচ্ছাকৃত নরহত্যার  অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকালে ৫২ থেকে ৬৮ বছর বয়সী তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একটি নির্মাণ সংস্থার দুই পরিচালক এবং একজন পরামর্শক রয়েছেন।

ভবনগুলো সংস্কার কাজের জন্য হংকংয়ের ঐতিহ্যবাহী বাঁশের স্ক্যাফোল্ডিং বা মাচা দিয়ে আবৃত ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই বাঁশের কাঠামোর মাধ্যমেই আগুন দ্রুত এক ভবন থেকে অন্য ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সর্বাত্মক উদ্ধার অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন। সাধারণত বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ছাড়া তিনি সরাসরি এমন নির্দেশনা দেন না।

হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি বলেছেন, “আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো আগুন নেভানো এবং আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধার করা। এরপর আহতদের সহায়তা এবং তদন্ত কাজ শুরু হবে।”

ইতিমধ্যে প্রায় ৯০০ জন মানুষ স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে খোলা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আগুনের ভয়াবহতার কারণে পার্শ্ববর্তী মহাসড়কের একাংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং পাশের আবাসিক এলাকার দুটি ভবনও খালি করা হয়েছে।

হংকং ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক ডেরেক আর্মস্ট্রং চ্যান জানান, “ভবনগুলোর ভেতরে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি থাকায় উদ্ধারকর্মীদের জন্য ভেতরে প্রবেশ করা এবং ওপরের তলায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”

উল্লেখ্য, গত মাসেই হংকংয়ের মধ্যাঞ্চলে একটি ভবনের স্ক্যাফোল্ডিংয়ে আগুন লেগে চারজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর আগে ২০০৮ সালে মং কক এলাকায় একটি কারাওকে বারে আগুন লেগে চারজন নিহত হওয়ার পর এটিই হংকংয়ের সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ড।