Home First Lead হংকং কনভেনশন কার্যকর: ‘বিষাক্ত জাহাজ ভাঙায় বৈধতা নয়, কঠোরতা দরকার’

হংকং কনভেনশন কার্যকর: ‘বিষাক্ত জাহাজ ভাঙায় বৈধতা নয়, কঠোরতা দরকার’

কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: আজ থেকে আন্তর্জাতিক জলযান সংস্থা (আইএমও)-এর তত্ত্বাবধানে “জাহাজের নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পুনর্ব্যবহার সংক্রান্ত হংকং আন্তর্জাতিক কনভেনশন” (এইচকেসি) আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হলো। তবে এর বৈধতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংস্থা ‘এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম’।

সংস্থাটির মতে, এই কনভেনশন টেকসই ও মানবিক জাহাজ পুনর্ব্যবহারের কোনো রোডম্যাপ দেয় না। বরং এটি এমন এক শিল্পপদ্ধতিকে বৈধতা দেয়, যা উন্নয়নশীল দেশের শ্রমিক ও পরিবেশের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে।

সমালোচনার মূল পয়েন্ট:

জাহাজ ভাঙার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত “বিচিং” পদ্ধতি এখনো বৈধ রয়ে গেল এই কনভেনশনে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই পদ্ধতিতে জোয়ারভাটা অঞ্চলেই পরিত্যক্ত জাহাজ ভেঙে ফেলা হয়, যা একদিকে শ্রমিকদের জীবনহানির ঝুঁকি বাড়ায়, অন্যদিকে বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে দূষিত করে উপকূলীয় পরিবেশ।

NGO Shipbreaking Platform-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ইনগভিল্ড জেনসেন বলেন, “এই কনভেনশন মূলত এমন শিপিং কোম্পানিগুলোর সুবিধা নিশ্চিত করে, যারা নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনার প্রকৃত খরচ এড়াতে চায়। এটা টেকসই ভবিষ্যতের রূপরেখা নয়, বরং দায়িত্বহীনতা লুকানোর ঢাল।”

সনদ পেলেও মৃত্যু থেমে নেই
হংকং কনভেনশন মেনে চলছে বলে দাবি করে ভারত ও বাংলাদেশের শতাধিক বিচিং ইয়ার্ড ‘স্টেটমেন্ট অফ কমপ্লায়েন্স’ পেয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিন্যাসকারী সংস্থার কাছ থেকে। অথচ এইসব ইয়ার্ডে নেই যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নেই হাসপাতাল কিংবা জরুরি সেবার অবকাঠামো। এমনকি ২০২৩ সালে এমন একটি সনদপ্রাপ্ত ইয়ার্ডে বিস্ফোরণে ৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে।

আইন উপেক্ষার সুযোগ
এই কনভেনশন কাঠামোগতভাবে নির্ভর করে দুর্বল “ফ্ল্যাগ স্টেট কন্ট্রোল”-এর ওপর, যেখানে জাহাজ মালিকরা অবলীলায় রেজিস্ট্রেশন বদলে উন্নয়নশীল দেশের বিচিং ইয়ার্ডে জাহাজ পাঠিয়ে দেয়। বহু ক্ষেত্রে মিথ্যা কাগজে বলা হয় যে জাহাজটিতে বিষাক্ত উপাদান নেই, অথচ বাস্তবে থাকে অ্যাসবেস্টস, পিসিবি, ভারী ধাতুর রঙ ইত্যাদি।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কেবল বাংলাদেশেই ৭৯ হাজার টন অ্যাসবেস্টস, ২ লাখ ৪০ হাজার টন পিসিবি কেবল এবং ওজোন ধ্বংসকারী উপাদানসহ বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্য প্রবেশ করবে পুরোনো জাহাজের মাধ্যমে।

বাসেল কনভেনশনকে পাশ কাটানোর চেষ্টা
হংকং কনভেনশনকে সামনে রেখে বহু প্রভাবশালী মহল এখন বাসেল কনভেনশন-এর কঠোর নিয়মকে পাশ কাটানোর কৌশল নিচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। বাসেল কনভেনশন উন্নয়নশীল দেশে বিষাক্ত বর্জ্য রপ্তানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে।

এগিয়ে আসছে কিছু দায়িত্বশীল কোম্পানি
হ্যাপাগ-লয়েড, হোয়েজ অটোলাইনার, ওয়ালেনিয়াস-উইলহেলমসন প্রমুখ কোম্পানি ইতিমধ্যে বিচিং বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে এবং ড্রাইডক ভিত্তিক পুনর্ব্যবহার পদ্ধতি গ্রহণ করছে। Petrobras নিজ দেশে ইকো-ইয়ার্ড তৈরি করছে।

এই কনভেনশন কার্যকর হলেও এতে “সুরক্ষিত ও ন্যায্য” পুনর্ব্যবহার পদ্ধতির কোনো বাধ্যতামূলক মানদণ্ড নেই, যার সুযোগে অব্যাহত থাকবে দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলে শ্রমিক মৃত্যু ও পরিবেশ ধ্বংসের ঘটনা।

পরিবেশবাদীরা তাই বলছেন, “বিচিং পদ্ধতিকে বন্ধ করতে হবে। স্বীকৃতি নয়, নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।”

👉 বিস্তারিত জানতে কমেন্ট দেখুন ও মতামত জানান।
🔁 সচেতনতা বাড়াতে শেয়ার করুন প্রতিবেদনটি।
📢 আপনার মতে, ‘বিচিং’ পদ্ধতি কি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত? মতামত দিন নিচে।
📍 পরিবেশবিষয়ক আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পেতে আমাদের ফলো করুন।