Home আন্তর্জাতিক ইউরোপীয় বাজার টার্গেট করে এগোচ্ছে তুরস্ক ও চীনের জাহাজভাঙ্গা শিল্প

ইউরোপীয় বাজার টার্গেট করে এগোচ্ছে তুরস্ক ও চীনের জাহাজভাঙ্গা শিল্প

ছবি এ আই
কামরুল ইসলাম: হংকং আন্তর্জাতিক কনভেনশন কার্যকর হওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি তুরস্ক ও চীনের জাহাজভাঙ্গা শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিশেষত ইউরোপীয় শিপমালিকরা এখন নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে জোর দেওয়ায় এই দুই দেশ নিজেদের ইয়ার্ড আধুনিকায়নে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
তুরস্কে আধুনিকায়ন

তুরস্কের আলিয়াাগা অঞ্চল ইতোমধ্যেই ইউরোপীয় মান অনুসারে একটি নিরাপদ শিপ রিসাইক্লিং হাব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে সমুদ্র সৈকতের বদলে কংক্রিট ফ্লোরে জাহাজ ভাঙা হয়, যাতে তেল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক মাটিতে মিশে না যায়। তাছাড়া অ্যাসবেস্টস, পারদ ও অন্যান্য বর্জ্য আলাদা করে নিরাপদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তুরস্ক শিপ রিসাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “ইউরোপীয় বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের আন্তর্জাতিক মান পূরণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সরকারও নানা প্রণোদনা ও সহায়তা দিচ্ছে।”

চীনের কৌশল

অন্যদিকে, চীনও শিপ রিসাইক্লিং শিল্পকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করার দিকে এগোচ্ছে। পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে কয়েকটি বড় ইয়ার্ডে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে জাহাজ কাটা হচ্ছে। ক্ষতিকর বর্জ্য আলাদা করে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।

চীনের এক উদ্যোক্তা জানান, “আমরা শুধু ধাতু সংগ্রহ করছি না, বরং পরিবেশবান্ধব উপায়ে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করছি। এতে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা বাড়ছে।”

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

তুরস্কে বছরে আট থেকে দশ লাখ টন এবং চীনে বারো থেকে পনের লাখ টন স্ক্র্যাপ ধাতু উৎপন্ন হয়। পরিমাণে দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় কম হলেও, নিরাপদ ও টেকসই প্রক্রিয়ার কারণে ইউরোপীয় মালিকরা এই দুটি দেশকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

শ্রমিক ও পরিবেশ সুরক্ষা

উভয় দেশেই শ্রমিকদের সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের মতো সংস্থাগুলো নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

তুরস্ক ও চীন নিজেদের জাহাজভাঙ্গা শিল্পকে টেকসই করতে দ্রুত আধুনিকায়ন করছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার চট্টগ্রাম, আলাং ও গাদানির সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নেমেছে এই দুটি দেশ। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে না পারলে দক্ষিণ এশিয়ার অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরও কমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।