Home Second Lead হজের প্রস্তুতি: শারীরিক, আর্থিক ও আত্মিক

হজের প্রস্তুতি: শারীরিক, আর্থিক ও আত্মিক

ছবি : সংগৃহীত
ধারাবাহিক প্রতিবেদন: পবিত্র আহ্বানের পথে পর্ব-২

মওলানা মোহাম্মদ কাউসার: হজ এক পবিত্র সফর। এটি কেবল একটি ধর্মীয় রীতিমাত্র নয়, বরং একটি আত্মিক যাত্রা—যা মানুষকে শুদ্ধ করে, জীবনকে পরিশীলিত করে। তবে এই সফরে রওনা হওয়ার আগে প্রয়োজন কিছু গভীর প্রস্তুতি। একজন মুসলমান যখন হজ পালনের ইচ্ছা পোষণ করে, তখন তার জীবনে আসে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা। আর এই পরিবর্তনের জন্য চাই তিনটি দিক থেকে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি—শারীরিক, আর্থিক ও আত্মিক।

শারীরিক প্রস্তুতি: সহনশীলতা গড়ার চর্চা

হজের সফর সহজ নয়। প্রচণ্ড গরম, অতিরিক্ত ভিড়, দীর্ঘ হাঁটা—সবমিলিয়ে হজে শারীরিক ধকল অনেক। সেজন্যই হজযাত্রীকে আগে থেকেই নিজের দেহকে প্রস্তুত করতে হয়। হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা জরুরি।

বিশেষ করে যারা বয়সে প্রবীণ কিংবা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন—তাদের ক্ষেত্রে হজের প্রস্তুতিপর্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া, প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখা, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

সৌদি আরবের আবহাওয়া অনেক গরম। অনেক সময় ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান, ছাতা ব্যবহার, হালকা সাদা পোশাক পরার অনুশীলন করা হজের সময় সহায়ক হতে পারে।

আর্থিক প্রস্তুতি: হালাল ও নির্ভরযোগ্য উপার্জন:

হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, তবে এটি ফরজ কেবল সেই ব্যক্তির জন্য যিনি সামর্থ্যবান। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘‘…যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে তার উপর হজ ফরজ’’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)।

এই সামর্থ্য শুধু যাতায়াত খরচ নয়, বরং পরিবার-পরিজন রেখে যাওয়ার সময় তাদের ভরণ-পোষণের জন্যও পর্যাপ্ত অর্থ থাকা চাই। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে টাকা জমিয়ে হজের জন্য প্রস্তুতি নেন। কেউ কেউ স্বর্ণ বিক্রি করে, কেউ জমি বন্ধক রেখে হজে যান। কিন্তু হজের অর্থ অবশ্যই হালাল উপার্জন থেকে হতে হবে, কেননা হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে হজ কবুল হয় না।

হজের খরচের মধ্যে থাকে—হজ প্যাকেজ ফি, প্লেন ভাড়া, খাবার, আবাসন, কোরবানি, যাতায়াত, জামারাতের প্রস্তুতি ইত্যাদি। অতএব, একটি সুশৃঙ্খল আর্থিক পরিকল্পনা ছাড়া হজে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

আত্মিক প্রস্তুতি: অন্তরের পরিচ্ছন্নতা ও নিয়তের বিশুদ্ধতা:

হজের প্রধান উদ্দেশ্য আত্মশুদ্ধি। তাই আত্মিক প্রস্তুতি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হজে যাওয়ার আগে নিজের ভেতরের দোষত্রুটি, অহংকার, হিংসা, রাগ—সবকিছু বাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। হজ হচ্ছে তওবার ক্ষেত্র।

একজন হজযাত্রীকে হজের নিয়ম-কানুন, দোয়া, তাসবিহ, সূরা মুখস্থ করা উচিত। হজের বিভিন্ন ধাপ যেমন তাওয়াফ, সাঈ, মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ, আরাফায় অবস্থান—এসব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা দরকার। এতে হজের প্রতিটি ধাপ হবে হৃদয়গ্রাহী এবং উদ্দেশ্যপূরণকারী।

পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া, ঋণমুক্ত হওয়া, কারও প্রতি অন্যায় না রাখা এসব আত্মিক প্রস্তুতির অংশ। হজ যেন হয় এক বিশুদ্ধ ইবাদত, সেই লক্ষ্যে আত্মাকে আগেই প্রশিক্ষণ দিতে হয়।

হজে যাওয়ার পথটি কেবল বিমানযাত্রা নয়, এটি আত্মার একটি যাত্রা। সেই যাত্রা সফল করতে হলে দেহ, মন ও অর্থ তিনটি প্রস্তুতিই জরুরি। একমাত্র তখনই হজ হবে কবুল, হজ হবে জীবন বদলে দেওয়া এক মোবারক অধ্যায়।


পরবর্তী পর্ব: মক্কা ও মদিনা: দুই পবিত্র নগরীর অন্তরঙ্গ পরিচয়