Home Second Lead হজ: অর্থনীতি, ঐক্য ও সমাজের জাগরণ

হজ: অর্থনীতি, ঐক্য ও সমাজের জাগরণ

তাবু নগরী : মিনা
ধারাবাহিক প্রতিবেদন: পবিত্র আহ্বানের পথে পর্ব-৯
মওলানা মোহাম্মদ কাউসার: পবিত্র হজ শুধু একটি ইবাদত নয়, এটি বিশ্ব মুসলিম সমাজের এক মহামিলন, যা ধর্মীয় অনুভূতির পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গভীর ছাপ ফেলে। প্রতিবছর কোটি মুসলমান মক্কা-মদিনায় এসে এক অনন্য ঐক্যের ছবি আঁকে। এ মহাযাত্রা যেমন আত্মশুদ্ধির পথ, তেমনি মুসলিম ঐক্যের প্রতীক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির উৎস।
অর্থনীতিতে হজের বিস্তার:

হজ মৌসুমে সৌদি আরবে আগত লাখ লাখ মুসল্লি দেশটির অর্থনীতিতে প্রবল সঞ্চারণ তৈরি করে। বিমান টিকিট, হোটেল, পরিবহন, খাবার, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, যন্ত্রপাতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা সব মিলিয়ে বিশাল কর্মসংস্থান ও সেবা খাত গড়ে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ এই মৌসুমি চাহিদাকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করে।

একটি পরিসংখ্যান বলছে, হজ মৌসুমে প্রতিটি হাজী গড়ে কয়েক হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় করে। এই বিপুল পরিমাণ ব্যয়ের একটি অংশ সরাসরি সৌদি আরবে, বাকি অংশ নিজ নিজ দেশের ভ্রমণ সংস্থা, পাসপোর্ট অফিস, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আয় বাড়াতে সহায়তা করে।

হজ শেষ হলেও হাজীদের দেশে ফিরে কেনাকাটা, উপহার, মিষ্টি বিতরণ, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন ইত্যাদির মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিও সক্রিয় হয়ে ওঠে। অর্থাৎ হজ একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চক্রের চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।

মুসলিম ঐক্যের প্রতীক:

হজ হচ্ছে মুসলিম বিশ্বে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও একতার এক মহোৎসব। এখানে জাতি, ভাষা, বর্ণ কিংবা আর্থিক অবস্থার ভেদাভেদ থাকে না—সবাই এক পোশাকে, এক সুরে আল্লাহর দরবারে মাথা নত করে।

এ অভিজ্ঞতা মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও ঐক্যের বোধ জাগ্রত করে। একে অপরের সঙ্গে মিশে তারা বোঝে ভিন্ন সংস্কৃতির সৌন্দর্য, একই কিবলার শক্তি ও একটি উম্মাহর অস্তিত্ব।

বিশেষ করে তরুণরা হজ থেকে ফিরে বিশ্ব মুসলিম পরিচয়ের প্রতি নতুন করে গর্ববোধ করে এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হয়। এতে ধর্মীয় শিক্ষা ও বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বোধ আরও জোরদার হয়।

ধর্মীয় শিক্ষা ও সমাজে পরিবর্তন:

হজের পর অনেক হাজীই নিজ এলাকায় ধর্মীয় শিক্ষা ও সচেতনতায় ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। অনেকে নামাজ-রোজার পাশাপাশি সমাজে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হন। এতে পরিবার, মহল্লা ও সমাজে নৈতিক শুদ্ধি আসে।

হজ থেকে ফিরে অনেকে মাদ্রাসা, মসজিদ, দাতব্য সংস্থা বা সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হন। এভাবে হজ ব্যক্তি পর্যায়ের বাইরে সমাজ সংস্কারের এক উৎসে পরিণত হয়।

হজ একটি পবিত্র আহ্বান আত্মশুদ্ধির, ত্যাগের এবং ঐক্যের। কিন্তু এর পরিধি শুধু মসজিদুল হারামেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি এবং মননের জগতে গভীর প্রভাব ফেলে।

এই মহাযাত্রা প্রমাণ করে, মুসলিম উম্মাহ শুধু আধ্যাত্মিক নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক শক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ আধার। বিশ্বমানবতার জন্য হজ হতে পারে এক অনন্য শিক্ষা ভ্রাতৃত্বের, শান্তির এবং সহাবস্থানের।