শারীরিক সুস্থতার মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া হজে নয়
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: সৌদি আরব ২০২৬ সালের হজ পালনের বিস্তারিত রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১২ অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে ইচ্ছুকদের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এরপর ৯ নভেম্বর সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মেডিকেল ফিটনেসের ওপর। এবার থেকে শারীরিক সুস্থতার মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ হজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। বিশেষ করে হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতা, লিভার সিরোসিস, স্নায়ুবিক সমস্যা, ক্যানসার রোগীদের (কেমোথেরাপি/রেডিওথেরাপি নেওয়া), ঝুঁকিপূর্ণ অন্তঃসত্ত্বা নারীদের হজে অংশ নিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
হজ এজেন্সিগুলো আগামী বছরে সর্বোচ্চ দুইটি সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। সব ধরনের অর্থ লেনদেন এবং চুক্তি ‘নুসুক মাসার’ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে করতে হবে। কুরবানির অর্থও এই প্ল্যাটফর্মে জমা দিতে বাধ্যতামূলক। হজযাত্রীদের খাবারের চুক্তি সৌদি ক্যাটারিং কোম্পানির সঙ্গে করতে হবে। তাঁবু, সেবা প্যাকেজ ও পরিবহণের খরচও নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান সময়সীমা ও কর্মপরিকল্পনা:
- ১০ জুলাই: সৌদি সরকার হজের কোটা ঘোষণা করবে।
- ২৬ জুলাই থেকে: ‘নুসুক মাসার’ প্ল্যাটফর্মে ক্যাম্প তথ্য পর্যবেক্ষণ ও অর্থ স্থানান্তর শুরু হবে।
- ৯-২৩ আগস্ট: চলতি হজ মৌসুমের ব্যবহৃত ক্যাম্পগুলো পরবর্তী বছরের জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য।
- ২৪ আগস্ট: প্যাকেজ, আবাসন, পরিবহণ চুক্তি, এয়ারলাইন্স নির্ধারণ ও ফ্লাইট সূচি চূড়ান্ত করতে হবে।
- ২১ ডিসেম্বর: তাঁবু ভাড়া ও মাশায়ের প্যাকেজ বাবদ অর্থ জমা দিতে হবে।
- ৪ জানুয়ারি ২০২৬: সেবা সংস্থার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি ও ফ্লাইট সূচি নির্ধারণ।
- ২০ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি: মক্কা-মদিনার হোটেল ও পরিবহণ খরচের অর্থ স্থানান্তর প্রক্রিয়া।
- ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ: হজযাত্রীদের ভিসা প্রদান।
- ১৮ এপ্রিল থেকে: হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রা শুরু।
সরকারি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা এসেছে। হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ড. মো. মঞ্জুরুল হক জানিয়েছেন, শারীরিক সুস্থতার জন্য সিভিল সার্জনের প্রত্যয়ন দেখানো লাগবে।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন বলেন, জটিল রোগে আক্রান্তরা হজে যাওয়া উচিত নয়, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে বা ঝুঁকি কম থাকলে মেডিকেল বোর্ড বিশেষ সিদ্ধান্ত দিতে পারবে।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার উল্লেখ করেছেন, সৌদি আরবের নিয়মাবলি অনেক সময় বদলায়, যা বাংলাদেশি হজ এজেন্সিদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করে। এছাড়া খাদ্য ও অন্যান্য সেবায় বাংলাদেশের লোকজন অসুবিধায় পড়ে।
বর্তমানে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৩৩,৫২৭ জন, যেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মাত্র ৬৬১ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩২,৮৬৬ জন। কোটা পূরণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা শঙ্কিত।
বিশ্বজুড়ে ২০২৫ সালে ১৭১ দেশের ১৬ লাখের বেশি হজ পালনের মধ্যে বাংলাদেশি হাজিদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৭ হাজার।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন গত বছর সৌদি সরকারের সুশৃঙ্খল ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন। পাশাপাশি হজের সময় নুসুক কার্ড বিতরণ, পরিবহণ সেবা, স্বাস্থ্যসেবা ও মৃত্যুহার কমানোর জন্য সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার ড. আল হাসান ইয়াহিয়া আল মানাখারা বাংলাদেশের সুপারিশ মনোযোগ সহকারে গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন এবং সময়মতো কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত হাইলাইটস:
- মেডিকেল ফিটনেস বাধ্যতামূলক, বিশেষ রোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের হজ নিষিদ্ধ
- নিবন্ধন শেষ ১২ অক্টোবরের মধ্যে
- চুক্তি ও অর্থ লেনদেন ‘নুসুক মাসার’ প্ল্যাটফর্মে করতে হবে
- খাবার, তাঁবু, পরিবহণসহ সব সেবার জন্য নির্দিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাধ্যতামূলক
- ভিসা ফেজ শুরু ফেব্রুয়ারি থেকে, যাত্রা এপ্রিল থেকে
- কোটা ঘোষণা ১০ জুলাই, কোটা বৃদ্ধি না করার অনুরোধ
- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে মেডিকেল ফিটনেস নিশ্চিতকরণ