আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বলেছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো টার্গেট করার পর ইরান পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে হরমুজ প্রণালী বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।
১৭ জুন মঙ্গলবার, ইসরায়েল একতরফাভাবে দাবি করে, তারা ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ কেন্দ্র ও সামরিক কমান্ড পোস্টে বিমান হামলা চালিয়েছে। এর মাত্র কয়েকদিন পর, ২১ জুন শনিবার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, আমেরিকাও ইরানের ফোরদো, ইসফাহান ও নাটাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে ‘পুরোপুরি ধ্বংসাত্মক’ হামলা চালিয়েছে।
এর জবাবে ইরানের পার্লামেন্ট ২২ জুন রোববার হরমুজ প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, “এই পদক্ষেপের মাধ্যমে পশ্চিমা আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হলো।”
বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস এই হরমুজ প্রণালী দিয়েই পরিবাহিত হয়। প্রণালিটি ওমান ও ইরানের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে পারস্য উপসাগরকে আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশে এর প্রস্থ মাত্র ২১ মাইল, যার মধ্যে মাত্র ২ মাইল চওড়া চ্যানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেলবাহী জাহাজ চলাচল করে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি সরবরাহে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে, যার ফলে তেলের দাম ১৩০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
অতিরিক্ত তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অধিকাংশ তেল এই প্রণালী দিয়েই রপ্তানি হয়। তবে সৌদি আরব ও আমিরাত বিকল্প পাইপলাইন ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে, যার মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ২৬ লাখ ব্যারেল তেল পরিবহণ সম্ভব।
এছাড়া বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিকারক কাতারও এই প্রণালীর ওপর নির্ভরশীল। ফলে এই সংকট শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
এদিকে, ১৭ জুন হরমুজ প্রণালী সংলগ্ন এলাকায় দুটি তেলবাহী ট্যাংকারের সংঘর্ষ ও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ইলেকট্রনিক জ্যামিং বাড়ার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হলেও কোনো প্রাণহানি বা তেল ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক ‘ট্যাংকার যুদ্ধ’-এর স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে। তখনও উভয় দেশ একে অপরের রপ্তানি বন্ধে আঘাত হেনেছিল।
বর্তমানে এই অঞ্চলে মার্কিন পঞ্চম নৌবহর মোতায়েন রয়েছে, যারা বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে রয়েছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান সংঘাত পরিস্থিতিতে সেই নিরাপত্তা কতটা কার্যকর থাকবে, তা নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে।