Home সারাদেশ হাত ভাঙা মা, পা হারানো মেয়ে আর লাশ হয়ে ফিরলেন বাবা

হাত ভাঙা মা, পা হারানো মেয়ে আর লাশ হয়ে ফিরলেন বাবা

সংগৃহীত ছবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী:  বাঘা উপজেলার বানিয়াপাড়ায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনা। পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু উম্মে তুরাইফা সেদিনও বাবার মোটরসাইকেলে চড়ে হাসিমুখে স্কুলে যাচ্ছিল। পাশে ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা মা জেসমিন আক্তার। কেউ ভাবেনি সেই সকালটাই তাদের জীবনের সবচেয়ে বিভীষিকাময় সকাল হয়ে উঠবে।

সোমবার সকালে বাঘা পৌরসভার বানিয়াপাড়া এলাকায় তুরাইফাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন তার বাবা জাহেদুল ইসলাম শান্ত (২৭)। তাঁরা মোটরসাইকেলে ছিলেন। আচমকাই বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস ‘সুপারসনি’র সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। মুহূর্তেই শান্ত ও তাঁর মেয়ে তুরাইফা ছিটকে পড়ে যান, আর বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হন। এ সময় শান্ত ও তুরাইফার ডান পা হাঁটুর ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অন্তঃসত্ত্বা জেসমিন আক্তারের ডান হাতের হাড় ভেঙে যায়।

রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকেই উদ্ধার করে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও তৎপরভাবে চিকিৎসা চলছে।

শান্ত ছিলেন নাটোরের লালপুর উপজেলার জামতলা গ্রামের প্রবাসী এজাহার আলীর ছেলে। দেশে ফিরে তিনি বাঘায় একটি হার্ডওয়্যার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তাঁর মেয়ে তুরাইফা স্থানীয় গ্রিন হ্যাভেন স্কুলের প্লে শ্রেণির শিক্ষার্থী। সকালে মেয়েকে কোলে নিয়ে স্কুলে পৌঁছে দেওয়াই ছিল শান্তর দৈনন্দিন রুটিন। কিন্তু সেই রুটিনের মধ্যেই হানা দিল এক নির্মম পরিণতি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুপারসনি নামের যাত্রীবাহী বাসটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছিল এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। পুলিশ দুর্ঘটনার পরপরই বাসটিকে জব্দ করেছে। তবে চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ ফ ম আছাদুজ্জামান জানান, চালককে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

স্থানীয়দের মতে, এই সড়কপথে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত গতির পাশাপাশি বাসচালকদের বেপরোয়া মনোভাবই এসব ঘটনার অন্যতম কারণ। এলাকাবাসী অবিলম্বে এই সড়কে গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

জেসমিন এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন। চোখের সামনে স্বামীকে হারিয়ে এবং সন্তানের পা হারিয়ে তিনি বাকরুদ্ধ। তাঁর মাতৃত্ব আর মেয়ে তুরাইফার ভবিষ্যৎ এখন শঙ্কার মুখে।

এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে নিঃস্ব করেনি, বরং আমাদের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কত শিশুকে এভাবে পা হারিয়ে, বাবা হারিয়ে বড় হতে হবে? কত অন্তঃসত্ত্বা নারীকে এভাবে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে যন্ত্রণার ভার?

এই একটি পরিবারের আর্তনাদ যেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও সড়ক কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছায় এই প্রত্যাশা আজ সাধারণ মানুষের।