হেলথ ডেস্ক: চার দশকের বেশি সময় নিজের পরিবারিক দুধ খামারে পরিশ্রম করে কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৭ বছর বয়সী লিন্ডা লোপেস। ছিলেন পরিপূর্ণ কর্মঠ ও আত্মনির্ভর একজন নারী। নিজেই ঘাস কেটে বাড়ির লন পরিচর্যা করতেন, বাজারের ভারী ব্যাগও নিজেই বহন করতেন। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া তাঁর অভ্যাসে ছিল না। কিন্তু মায়ের অসুস্থতার পর তিনি বুঝতে পারেন, হৃদ্যন্ত্রের যত্ন নেওয়া কতটা জরুরি।
লিন্ডার মা যখন ৯৮ বছর বয়সে দীর্ঘস্থায়ী কাশির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন চিকিৎসকরা তাঁর হার্ট ভাল্ভে গুরুতর সমস্যা খুঁজে পান। কিন্তু জটিল শারীরিক অবস্থার কারণে চিকিৎসা শুরুর আগেই তিনি মারা যান। এই ঘটনাই মেয়ের জীবনে ছিল এক বড় সতর্কবার্তা।
“আমার মায়ের রোগ নির্ণয়ের পর মনে পড়ল, আমাকেও একসময় ডাক্তার বলেছিলেন আমার হার্টে সামান্য শব্দ হয়, কিন্তু সেটা তেমন চিন্তার নয়,” বলেন লিন্ডা। “তখন ভাবলাম, এখনই নিজের অবস্থা পরীক্ষা করা দরকার।”
নীরবভাবে এগিয়ে চলে হার্ট ভাল্ভ ব্যর্থতা
চিকিৎসকরা লিন্ডার হার্ট পরীক্ষা করে জানালেন, তাঁরও রয়েছে ‘সিভিয়ার অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস’—যা এক ধরনের হার্ট ভাল্ভ ব্যর্থতা। এতে হার্টের ভাল্ভে ক্যালসিয়াম জমে শক্ত হয়ে যায়, ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
হার্ট ভাল্ভ রোগের বিভিন্ন ধরন আছে, তবে অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস সবচেয়ে বিপজ্জনক। উপসর্গগুলো সাধারণত বয়সজনিত ক্লান্তি বা নিঃশ্বাসকষ্ট বলে ভুল হয়, যার ফলে রোগটি অনেক সময় ধরা পড়ে দেরিতে।
ডা. মেগান কয়েলরাইট, যিনি একজন অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট, বলেন, “হার্ট ভাল্ভ ব্যর্থতা অনেক সময় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয়। অনেকেই ভাবে ক্লান্তি বা মাথা ঘোরা স্বাভাবিক বার্ধক্য, অথচ এগুলো হতে পারে হার্ট ভাল্ভের সমস্যা। প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা করলেই জীবন রক্ষা সম্ভব।”
প্রাথমিক পরীক্ষাই জীবন বাঁচায়
লিন্ডার চিকিৎসক তাঁকে হাঁটতে বলেন। সামান্য উঁচু পথে হাঁটতেই তিনি বুঝতে পারেন কিছু একটা ঠিক নেই—শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, কথা বলা কঠিন হয়ে পড়ে। এরপরই চিকিৎসকরা তাঁকে জরুরি পরীক্ষা করাতে বলেন।
পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়, তাঁর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিসের অবস্থা গুরুতর। এরপর ডাক্তাররা পরামর্শ দেন ট্রান্সক্যাথেটার অ্যাওর্টিক ভাল্ভ রিপ্লেসমেন্ট বা টিএভিআর নামের একটি অল্প আঘাতের চিকিৎসা পদ্ধতি নেওয়ার। এতে পায়ের হালকা ছিদ্রের মাধ্যমে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পুরোনো ভাল্ভের ভেতরে নতুন ভাল্ভ বসানো হয়, ফলে ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন পড়ে না।
চিকিৎসা শেষে লিন্ডা এখন আবার আগের মতো সক্রিয় জীবন ফিরিয়ে পেয়েছেন। নিজের বাগান দেখা, ঘরের কাজ আর স্বামীর সঙ্গে সময় কাটানো—সবই করছেন আগের মতো।
অন্যদের জন্য প্রেরণা
লিন্ডা এখন নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে অন্যদেরও সচেতন করছেন। তিনি বলেন, “আমি ডাক্তার দেখাতে খুব একটা পছন্দ করতাম না। কিন্তু এখন সবার কাছে বলি—যদি আমি করতে পারি, তবে যেকোনো মানুষই পারবে।”
চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী সবারই নিয়মিত হার্ট ভাল্ভ পরীক্ষা করা উচিত। সাধারণ স্টেথোস্কোপে হার্টে শব্দ শোনা গেলেই ইকোকার্ডিওগ্রাম করে নিশ্চিত হওয়া যায় অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস আছে কি না।
লিন্ডার মতো অনেকেই সময়মতো পরীক্ষা না করায় মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েন। তাই লিন্ডার গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়—নীরব উপসর্গ মানেই নিরাপদ নয়, বরং সময়মতো পরীক্ষা জীবন বাঁচাতে পারে।










