সম্পাদকীয়:
গতকাল গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর যে ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে, তা শুধু ব্যক্তি হাসনাতের জন্য নয়, পুরো দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একজন রাজনৈতিক নেতার ওপর হামলা কোনো পরিস্থিতিতেই সমর্থনযোগ্য নয়। এমন হামলা রাজনৈতিক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু ক্ষতিকর নয়, এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্যও বিপদজনক।
হাসনাত আব্দুল্লাহ একটি রাজনৈতিক দলের সংগঠক। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু সেটা কখনও ব্যক্তি আক্রমণের পর্যায়ে চলে যাওয়ার অধিকার দেয় না। হামলার ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা ও শত্রুতার হার বাড়ছে, যা সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে মুক্তভাবে মত প্রকাশ করা এবং বিরোধী দলের নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখা। অথচ এই হামলা দেখিয়ে দিয়েছে যে, কিছু মানুষ আজও বিশ্বাস করে, তারা নিজেদের মতামত বা লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে সহিংসতার আশ্রয় নিতে পারে।
এনসিপি দলের অভিযোগ, হামলার আগে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী হাসনাতকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিল। এই ধরনের উস্কানি রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য ইন্ধন হয়ে দাঁড়ায়। একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা যদি এমন হুমকি দেয়, তাহলে সে সংগঠনের প্রতি জনমানুষের বিশ্বাস কীভাবে বজায় থাকবে? এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে রাজনৈতিক সহিংসতার ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এটা দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে।
এনসিপি এখন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। তাদের এই দাবি যৌক্তিক। তবে প্রশ্ন থাকে, রাজনৈতিক সহিংসতা রোধে আমাদের সমাজ, প্রশাসন, এবং রাজনৈতিক নেতারা কি যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে? সত্যিকার অর্থে যদি আমরা গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করতে চাই, তাহলে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, এবং সেই সঙ্গে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে নিজের দলের ভেতরেই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলা এই মুহূর্তে একটি পুঁজি হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ানোর কাজে। এর বিরুদ্ধে সকলের শক্ত প্রতিরোধ দরকার। এই হামলার প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দিতে হবে, এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, সহিংসতা নয়, কথা বলার স্বাধীনতা ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।