Home খেলাধুলা নাইজেরিয়ায় হিজাব পরে ফুটবল মাঠে মুসলিম কিশোরীরা

নাইজেরিয়ায় হিজাব পরে ফুটবল মাঠে মুসলিম কিশোরীরা

সংগৃহীত ছবি
স্পোর্টস ডেস্ক: ধর্মীয় রক্ষণশীলতা আর সামাজিক কটূচোখ উপেক্ষা করে নাইজেরিয়ার উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য কোয়ারায় একদল মুসলিম কিশোরী ফুটবলের মাঠে নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিচ্ছে। হিজাব পরে খেলায় অংশ নেওয়া এই মেয়েরা শুধু গোল নয়, ভাঙছে সমাজের পুরোনো ধারণার প্রাচীরও।
সংগৃহীত ছবি

১৭ বছর বয়সী মারিয়াম মুহাম্মদ প্রতিদিন বিকেলে স্থানীয় একটি স্কুল মাঠে পৌঁছে দেন নিজের স্বপ্নকে। গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে, হিজাব আর লেগিংস পরে তিনি নামেন মডেল কুইন্স ফুটবল অ্যাকাডেমির অনুশীলনে। পথে তাকে শুনতে হয় নানা কটূক্তি— “তুমি কিছুই করতে পারবে না।” কিন্তু মারিয়ামের উত্তর দৃঢ়, “আমি বড় কিছু হবো, ইনশাআল্লাহ।”

ধর্মীয় পোশাক পরে খেলতে কষ্ট হয়, তবু তিনি আপস করেন না।
“কখনো মনে হয় হিজাব খুলে ফেলি, কিন্তু পারি না। একজন ভালো মুসলিম হিসেবে চুল ঢেকে রাখতেই হবে,” বলেন মারিয়াম।

সংগৃহীত ছবি

তার মা কেহিন্দে মুহাম্মদ মেয়েকে খেলতে দিয়েছেন সমাজের বিরূপ মন্তব্য সত্ত্বেও।
“অনেকে আমাকে নিরুৎসাহিত করেছে, কিন্তু আমি সন্তানের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি,” বলেন তিনি। “আমি তার জন্য দোয়া করি এবং তার হিজাব টিমের জার্সির সঙ্গে মিলিয়ে নিজেই সেলাই করি।”

মডেল কুইন্স অ্যাকাডেমির কোচ মুহাইদিন আবদুলওয়াহাব বলেন, “আমরা অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করি যে, মেয়েরা শালীন পোশাকে খেলতে পারে। তবুও অনেকে রাজি হন না।”

দলের আরেক সদস্য, ১৯ বছর বয়সী বাশিরাত ওমোতোশো খেলাধুলায় আগ্রহী হলেও প্রায়ই অনুশীলনে যেতে পারেন না। কারণ তাকে মায়ের সঙ্গে বসে “পাফ পাফ” নামের ভাজা খাবার বিক্রি করতে হয়।
“ট্রেনিং হয় সকালে, কিন্তু আমাকে দোকানে থাকতে হয়,” বলেন তিনি। “এটাই আমাদের জীবিকা।”

প্রথমদিকে তার মা তিতিলায়োও মেয়ের ফুটবল খেলা মানতে পারেননি।
“মেয়েরা ফুটবল খেলবে কেন?”— প্রশ্ন ছিল তার।
কিন্তু পরে স্বামী ও পরিচিত ফুটবল তারকা আসিসাত ওশোয়ালার সাফল্য দেখে তিনি মত বদলান।
“অন্য মুসলিম মেয়েদের সাফল্য দেখে আমরাও ওকে খেলতে দিলাম,” বলেন তিনি।

যদিও দক্ষিণাঞ্চলে নারীদের ফুটবল অনেক বেশি জনপ্রিয় ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য, উত্তরে এখনো ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বাধা রয়ে গেছে। তবুও মডেল কুইন্সের মতো উদ্যোগ এসব দেয়াল ভাঙছে ধীরে ধীরে।

নাইজেরিয়ার নারী ফুটবল লিগ (NWFL) আফ্রিকার অন্যতম শক্তিশালী প্রতিযোগিতা। ২০২০ সালের পর থেকে দর্শকসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ, আর ম্যাচে উপস্থিতিও ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের জাতীয় নারী দল ‘সুপার ফ্যালকনস’-এর সাফল্য নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণে নতুন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

মারিয়াম মুহাম্মদ সম্প্রতি এক যুব ফুটবল টুর্নামেন্টে মডেল কুইন্স দলের নেতৃত্ব দেন। তারা রানার্সআপ হয়। খেলায় হেরে তিনি কেঁদেছিলেন একা, কিন্তু ভেঙে পড়েননি।
“আমি ফুটবল ভালোবাসি, এটা আমার স্বপ্ন। আমার পরিবার যখন আমার পাশে, তখন কিছুই আমাকে থামাতে পারবে না,” বলেন মারিয়াম দৃঢ় কণ্ঠে।