Home Second Lead সৌদিতে নির্যাতনে মৃত্যু, ফেরার পথে সড়কে নিথর আরও দুই ভাই

সৌদিতে নির্যাতনে মৃত্যু, ফেরার পথে সড়কে নিথর আরও দুই ভাই

ছবি: এআই
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: স্বপ্ন ছিল পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরানোর, দেশে ফিরে মা-বাবাকে একটু স্বস্তি দেওয়ার। সেই আশাতেই সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন তরুণ মোহাম্মদ রুবেল। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, সেখানে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারান তিনি। এক বছরের আইনি লড়াই শেষে যখন তার নিথর দেহ দেশে ফিরলো, তখন সেই দেহ বয়ে আনতেই প্রাণ গেল আরও দুই ভাইয়ের।
মোহাম্মদ রুবেল। সৌদি আরবে মৃত্যু।

গতকাল শনিবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ফটিকছড়ির ভূজপুর ইউনিয়নের মো. বাবুল (৩৭) ও তার মামাতো ভাই ঠিকাদার ওসমান গণি (৩৫)। তারা ফিরছিলেন ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। সৌদি আরবে নিহত ছোট ভাই রুবেলের লাশ নিয়ে। অ্যাম্বুলেন্সে করে ফটিকছড়ির পথে ফিরছিলেন তারা তিনজন। সঙ্গে ছিলেন তাদের আত্মীয় বশির সওদাগর। তিনিও  গুরুতর আহত অবস্থায় কুমিল্লা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দুটি মৃত্যু, একটি: একটি পরিবারের ভাঙা হৃদয়ের গল্প

ভূজপুর ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ার হতদরিদ্র পরিবার থেকে রুবেল পাড়ি জমান সৌদি আরবে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে। কাজ নেন একটি স্থানীয় খাবারের দোকানে। কিন্তু ভাগ্য তার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল না। মালিকের অনুমতি না নিয়ে একটি বার্গার খাওয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয় তার ওপর অমানবিক নির্যাতন। গুরুতর আহত রুবেল মারা যান ১৭ জুলাই ২০২৪, মদিনার এক হাসপাতালে। তার মৃত্যুর এক বছর পেরিয়ে যখন দেশে ফেরার সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়, তখনই বাড়ি ফিরছিল তার মৃতদেহ। কিন্তু সেই ফেরার পথেই চিরতরে নিঃশেষ হয় আরও দুটি প্রাণ।

বাবুল ও ওসমান
শেষ কথা হয় সকালবেলায়, বিকেলে নিঃশব্দ হয়ে যায় ফোন

নিহত ওসমান গণির ফুফাতো ভাই মাসুদ তালুকদার বলেন, “সকালেই ফোনে কথা হলো ওদের সঙ্গে। বলছিলো, রুবেলের লাশ নিয়েই ফিরছে। কিন্তু বিকেলেই খবর আসে অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় পড়েছে, আর ওসমান ও বাবুল নেই। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না… এখনও লাশ থানায় পড়ে আছে… ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।”

যন্ত্রণার ছবি আঁকে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ

চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় হঠাৎ অ্যাম্বুলেন্সটি একটি লরির পেছনে ধাক্কা দেয়। সার্জেন্ট মো. সাকলাইন জানান, ‘‘ঘটনাস্থলেই ওসমান মারা যান। বাবুলকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, সেখান থেকে  মেডিকেলে নেওয়ার পথে তিনিও মারা যান। চালক আহত হলেও পালিয়ে যায়।’’

গ্রামে শোক, জনমনে অস্থিরতা

ভূজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান চৌধুরী শিপন বলেন, “এক ভাই সৌদি আরবে নির্যাতনে মারা গেল, সেই ভাইয়ের লাশ আনতে গিয়ে দুই ভাই নিথর হয়ে ফিরছে। এমন মৃত্যুর খবর নিতে নিতে পুরো ইউনিয়নে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।”

তালুকদার পাড়ার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে কান্নায়। এক পরিবার হারিয়েছে তিন সন্তান। একটির নিথর দেহ এক বছর লড়াইয়ের পর ফিরল, অন্য দুজন ফিরল হিমশীতল অ্যাম্বুলেন্সে, রক্ত আর কান্নায় মোড়ানো বেদনাতুর এক দুপুরে।


এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি শেয়ার করুন, মতামত দিন—একটি পরিবার হারালো তিন সন্তান, প্রশাসন ও সমাজ কী ভূমিকা রাখবে এবার?