হেলথ ডেস্ক: আজ ২৮ জুলাই, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। প্রতিবারের মতো এবছরও দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যসচেতনতা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ঘোষিত এই দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য: “We’re not waiting”—অর্থাৎ, সময় নষ্ট নয়, এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
হেপাটাইটিস মূলত একটি প্রাণঘাতী যকৃতজনিত রোগ, যা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের মাধ্যমে ঘটে থাকে। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ১৩ লাখ মানুষ হেপাটাইটিসজনিত জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সচেতনতার অভাব, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং চিকিৎসার সীমিত সুযোগ হেপাটাইটিস ছড়ানোর পেছনে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হেপাটাইটিস কী?
হেপাটাইটিস একটি যকৃতের রোগ, যা সাধারণত পাঁচ ধরনের ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি হয়: হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই। এর মধ্যে হেপাটাইটিস বি এবং সি দীর্ঘমেয়াদে সংক্রমণ ঘটায় এবং লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের আশঙ্কা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস সংক্রমণ রক্ত, অপূর্ণ স্যানিটাইজড ইনজেকশন, যৌন সম্পর্ক, এবং মায়ের দেহ থেকে শিশুর শরীরে ছড়াতে পারে। হেপাটাইটিস এ ও ই মূলত দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায়।
বাংলাদেশে হেপাটাইটিসের চিত্র
বাংলাদেশে প্রায় ৮-১০ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। জনসচেতনতার অভাব, পর্যাপ্ত স্ক্রিনিং না হওয়া, এবং নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির দুর্বলতা এ রোগ মোকাবিলায় বড় বাধা হয়ে আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রম থাকলেও অনেক মানুষ এখনও বঞ্চিত। তাছাড়া, হেপাটাইটিস সি-এর ক্ষেত্রে এখনো কোনও টিকা নেই, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
প্রতিরোধই প্রধান চিকিৎসা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, হেপাটাইটিস প্রতিরোধে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা জরুরি:
- হেপাটাইটিস বি টিকা গ্রহণ
- নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন
- ব্যবহৃত সুচ ও সিরিঞ্জ একবারই ব্যবহার
- পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ খাদ্য ও পানি গ্রহণ
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং
এখনই পদক্ষেপের সময়
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসে এই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে যে, প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধ, পরীক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেরি নয়, বরং এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সরকার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাধারণ মানুষ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে হেপাটাইটিস নির্মূলে।