আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ঘানায় ভয়াবহ এক সামরিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দেশটির দুইজন মন্ত্রীসহ মোট আটজন প্রাণ হারিয়েছেন। বুধবার ৬ আগস্ট ঘানার রাজধানী আক্করা থেকে ওবুয়াসি শহরের উদ্দেশে রওনা হওয়া হেলিকপ্টারটি হঠাৎ করেই রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আশান্তি অঞ্চলের অ্যাডানসি জেলার একটি বনাঞ্চলে খোঁজ মেলে হেলিকপ্টারটির বিধ্বস্ত অবস্থার। সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে onboard থাকা কারও বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা নেই।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঘানার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এডওয়ার্ড ওমানে বোআমাহ এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইব্রাহিম মুরতালা মুহাম্মদ। তাদের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত উপনির্বাহী সমন্বয়কারী মুনিরু মোহাম্মদ লিমুনা এবং ক্ষমতাসীন এনডিসি দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক আঞ্চলিক মন্ত্রী স্যামুয়েল সারপং। আরও নিহত হয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি স্যামুয়েল আবোয়াজি। বিমানচালক স্কোয়াড্রন লিডার পিটার আনালা এবং তাঁর সহকারী ফ্লাইং অফিসার মানায়েন অ্যাম্পাদু ও সার্জেন্ট আডো মেনসাও ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
সরকার এই ঘটনাকে জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। চিফ অব স্টাফ জুলিয়াস ডেবরাহ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান দেশ শোকাহত এবং পতাকা মধ্যবিত্তে নামানো হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
হেলিকপ্টারটি ছিল চীনে নির্মিত হারবিন মডেলের জেড ৯ ইএইচ। এটি মূলত ইউটিলিটি কাজে ব্যবহৃত হলেও সামরিক পরিবহন ও নজরদারি কার্যক্রমেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মঙ্গলবার সকালে ঘানার বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে হেলিকপ্টারটি যখন ওবুয়াসির দিকে যাচ্ছিল তখন আবহাওয়ার অবস্থা ছিল তুলনামূলকভাবে অনুকূল। তবে দুর্ঘটনার সময় হঠাৎ করে বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কা এবং যান্ত্রিক ত্রুটি দুটো বিষয়ই মাথায় রেখে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
বিমানবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে অ্যাডানসির দুর্গম বনাঞ্চলে বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মরদেহ বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারেই উদ্ধার করে আক্করার সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতের প্রক্রিয়া চলছে।
ঘানার রাজনৈতিক অঙ্গনে এই দুর্ঘটনা একটি বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিহত মন্ত্রীদের কেউ কেউ ছিলেন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং উন্নয়ন পরিকল্পনায় সরাসরি যুক্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির জনগণ। বিরোধী দল এনপিপি এবং আন্তর্জাতিক নেতারাও শোকবার্তা দিয়েছেন।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় শীর্ষ পর্যায়ের এত সংখ্যক রাজনীতিবিদের একসঙ্গে মৃত্যুর ঘটনা ঘানায় এটাই প্রথম। এর আগে ২০২৪ সালে এক জরুরি অবতরণের ঘটনায় কোনও প্রাণহানি না ঘটলেও এবার এতবড় প্রাণহানির ঘটনায় গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
সরকার জানিয়েছে পুরো ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত হবে এবং দোষীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি এক সপ্তাহব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী দিনে নিহতদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।
ঘটনার আকস্মিকতা এবং উচ্চপর্যায়ের প্রাণহানি ঘানার নিরাপত্তা ও সামরিক ব্যবস্থাপনায় নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। হেলিকপ্টারগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়েও তদন্তকারীরা জোর দিচ্ছেন।
দেশটি এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডির মধ্যে দিয়ে এক নতুন সংকটকাল অতিক্রম করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।