Home আন্তর্জাতিক যুক্তরাষ্ট্রকে ‘গিঁট খুলে’ সমাধানের আহ্বান চীনের

যুক্তরাষ্ট্রকে ‘গিঁট খুলে’ সমাধানের আহ্বান চীনের

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো বাণিজ্য আলোচনা হয়নি: সমতার দাবি বেইজিংয়ের

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: চীন-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে নানা গুঞ্জন, তখন সরাসরি স্পষ্ট বার্তা দিল বেইজিং। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হে ইয়াদং জানালেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক বা বাণিজ্য আলোচনা বর্তমানে চলমান নেই। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে যেকোনো অগ্রগতির খবর ভিত্তিহীন এবং বাস্তবতাবিবর্জিত।

সমতার ভিত্তিতে সংলাপের ডাক

সংবাদ সম্মেলনে হে ইয়াদং বলেন, চীন সবসময়ই সংলাপ ও আলোচনার পক্ষে, তবে তা হতে হবে “পারস্পরিক সম্মান” এবং “সমতার ভিত্তিতে”। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা চীনারা সমস্যার জন্ম দেই না, তবে সমস্যা এলে পিছপা হব না। ভয়ভীতি, হুমকি বা ব্ল্যাকমেইলের পথ কখনোই চীনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

চীনা মুখপাত্রের এমন মন্তব্য যেন বর্তমান বৈশ্বিক টানাপোড়েনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। যেখানে শক্তির দম্ভ নয়, সম্মানের সঙ্গে পথ খোঁজার আহ্বান স্পষ্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভুল পথ’ সংশোধনের আহ্বান

হে ইয়াদং যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্ক আরোপের কঠোর সমালোচনা করেন। তার ভাষায়, এই সিদ্ধান্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নিজের অর্থনীতির জন্যই ক্ষতিকর হয়নি, গোটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকেও বিপর্যস্ত করেছে। তিনি বলেন, “এভাবে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করতে পারেনি, বরং বিশ্বের বাজার ও সাধারণ মানুষের জীবনে ভোগান্তি তৈরি করেছে।”

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর থেকেও এই নীতির বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা দেখা দিয়েছে। “যে গিঁট বেঁধেছে, তাকে নিজের হাতেই খুলতে হবে,” মন্তব্য করে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সমস্যার সমাধানের দায়িত্বও যুক্তরাষ্ট্রকেই নিতে হবে।

চীনের অবস্থান স্পষ্ট

চীন চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন আন্তরিকতার সাথে সব একতরফা শুল্ক প্রত্যাহার করে এবং দুই দেশের মধ্যে বিরোধ সমাধানে সমতার ভিত্তিতে খোলামেলা সংলাপ শুরু করে। চীন আবারও বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে—তারা উত্তেজনা চায় না, বরং সম্মান ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের পক্ষে।

বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির এই সম্পর্ক শুধু তাদের জন্যই নয়, গোটা বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই চীনের শান্ত, সংলাপভিত্তিক আহ্বান আজ আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক নতুন বার্তা বয়ে আনছে—শক্তির নয়, সম্মানের পথেই সমাধান।

ব্যাকগ্রাউন্ড: চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের পটভূমি

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা শুরু হয় ২০১৮ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন। এর জবাবে চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এই পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থায় দুই দেশের মধ্যে শত শত বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে দু’দেশ আংশিক চুক্তি করলেও সম্পূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি।
বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস, টেকনোলজি এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাণিজ্য আলোচনার বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।