ফ্ল্যাট ক্রেতার গাইডলাইন
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন যখন সত্যি করার প্রক্রিয়ায় নামেন, তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় অর্থায়ন। অধিকাংশ মানুষ নিজের সঞ্চয় দিয়ে পুরো টাকার ব্যবস্থা করতে পারে না, তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের থেকে গৃহঋণ (হোম লোন) নিতে হয়। তবে ঋণ নেওয়া যেমন সহজ, তেমনি তা সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া ভবিষ্যতে বড় আর্থিক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
ঋণ নেওয়ার আগে যা জানতে হবে
১. ঋণের ধরন বুঝুন:
ব্যাংক থেকে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের গৃহঋণ দেওয়া হয়—বেসিক ফিক্সড রেট, ভ্যারিয়েবল রেট, হাইব্রিড। প্রতিটির সুদের হার, কিস্তির পরিমাণ ও সময়কাল ভিন্ন হয়। সঠিক ধরনের ঋণ বেছে নেওয়া জরুরি।
২. সুদের হার ও শর্তাবলী খুঁটিয়ে পড়ুন:
সুদের হার শুধু মাসিক কিস্তি নয়, মোট কত টাকা আপনাকে ফেরত দিতে হবে সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। সুদের হারের সাথে লুকানো কোনো চার্জ, প্রিপেমেন্ট ফি বা জরিমানার শর্ত থাকলে তা ভালোভাবে বুঝে নিন।
৩. ঋণের মেয়াদ নির্ধারণে সতর্ক থাকুন:
লম্বা সময়ের ঋণ কিস্তি কম হলেও মোট সুদের পরিমাণ বেশি হয়। ছোট সময়ের ঋণ কিস্তি বেশি হলেও সুদের পরিমাণ কমে। আপনার আয়ের স্থায়িত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন।
বাজেট পরিকল্পনা ও EMI সামলানোর কৌশল
১. মাসিক আয়ের ৩০%-এর বেশি EMI রাখবেন না:
অর্থনীতিবিদরা সাধারণত পরামর্শ দেন, আপনার মোট মাসিক আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি EMI চালানোর চেষ্টা করবেন না। এতে দৈনন্দিন খরচ ও অন্যান্য দায়ভার সামলানো সহজ হয়।
২. অপ্রত্যাশিত খরচের জন্য জরুরি তহবিল রাখুন:
ঋণ কিস্তির পাশাপাশি অন্য জরুরি প্রয়োজন যেমন চিকিৎসা, শিক্ষা, গাড়ির মেরামত ইত্যাদির জন্য আলাদা তহবিল থাকা উচিত। তা না হলে আর্থিক চাপ বাড়বে।
৩. সঞ্চয় ও অতিরিক্ত আয়ের উৎস তৈরি করুন:
ঋণ কিস্তি মেটানোর পাশাপাশি সঞ্চয় চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়া পার্টটাইম কাজ বা ব্যবসা থেকে অতিরিক্ত আয়ের চেষ্টা করুন।
ঋণ নেওয়ার সময় সতর্কতা
১. বিক্রেতার ফাঁদ এড়িয়ে চলুন:
অনেক সময় বিক্রেতারা দ্রুত চুক্তি করাতে প্রলোভন দেখান, যেমন ‘কম সুদে লোন’, ‘সহজ কিস্তি’ ইত্যাদি। এগুলো যাচাই না করে ঋণ নেওয়া বিপদজনক।
২. অন্যদের মতামত নিন:
পরিবার, বন্ধু বা আর্থিক পরামর্শকের সাথে আলোচনা করুন। অভিজ্ঞ কাউকে পরামর্শ না নিয়ে বড় ঋণ নেয়া উচিত নয়।
৩. ঋণপত্র ভালোভাবে পড়ুন:
চুক্তির সব শর্ত খুঁটিয়ে পড়ুন। বিশেষ করে জরিমানার, সময়মত কিস্তি না দিলে কী শাস্তি, প্রিপেমেন্ট সুবিধা আছে কি না এসব।
আর্থিক ঝুঁকি কমানোর উপায়
১. ঋণ নেওয়ার আগে ব্যক্তিগত আর্থিক হিসাব নিন:
আপনার আয়, খরচ, সঞ্চয়ের হিসাব করে নিশ্চিত হোন, ঋণ বোঝা সামলানো আপনার পক্ষে সম্ভব।
২. বিমা করিয়ে নিন:
জীবন বীমা ও স্বাস্থ্য বীমা নিতে পারেন। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ঋণ পরিশোধে সাহায্য করবে।
৩. ঋণ সময়মতো পরিশোধ করুন:
অতিরিক্ত খরচ এড়াতে সময়মতো EMI জমা দিন। বিলম্ব করলে জরিমানা ও ক্রেডিট স্কোরে প্রভাব পড়বে।
৪. আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখুন:
অনিয়মিত খরচ কমিয়ে সঞ্চয় বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
সঠিক পরিকল্পনা ও সচেতনতার মাধ্যমে ঋণ নিতে পারলে, ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন হবে পূরণ এবং ভবিষ্যতে আর্থিক ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে।