Home বিনোদন অলিম্পিয়ান পিস্টোরিয়াসের প্রেমিকাকে গুলি করে হত্যা

অলিম্পিয়ান পিস্টোরিয়াসের প্রেমিকাকে গুলি করে হত্যা

আমিরুল মোমেনিন

১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবস। এই দিনটি বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় প্রেম, ভালোবাসা আর আন্তরিকতার প্রতীক হিসেবে। কিন্তু ২০১৩ সালের সেই দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া শহরের এক বিলাসবহুল বাড়িতে ঘটে এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি, যা এই দিবসটির অর্থকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়।

ঘটনাস্থলে ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত প্যারালিম্পিক তারকা অস্কার পিস্টোরিয়াস এবং তার প্রেমিকা, আইনজীবী ও মডেল রিভা স্টিনক্যাম্প। যে মানুষটি দেশবাসীর কাছে ছিলেন অনুপ্রেরণার প্রতীক, যিনি কৃত্রিম পা নিয়ে অলিম্পিকের ট্র্যাকে দৌড়েছেন, সেই মানুষই নিজের হাতে প্রাণ কেড়ে নেন নিজের প্রেমিকার।

এক প্রেম, যার ভিতরে লুকিয়ে ছিল উত্তেজনা ও অবিশ্বাস

পিস্টোরিয়াস ও রিভার সম্পর্ক ছিল মিডিয়ার চোখে রোমান্টিক, চমৎকার আর গ্ল্যামারাস। কিন্তু ভিতরে জমছিল উত্তেজনা, দ্বন্দ্ব ও সন্দেহ। আদালতের নথিপত্রে উঠে আসে, পিস্টোরিয়াস ছিলেন অত্যন্ত নিয়ন্ত্রণকারী ও হিংস্র মেজাজের মানুষ। একাধিকবার রিভাকে ফোনে বা বার্তায় হুমকির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।

তবে ২০১৩ সালের সেই রাতে কী ঘটেছিল?

মৃত্যুর মুহূর্ত: বাথরুমে চারটি গুলি

পুলিশের বিবরণ অনুযায়ী, ভোররাতে পিস্টোরিয়াস ঘুম থেকে উঠে বাথরুমের ভিতর শব্দ পান। তার দাবি ছিল, তিনি ভাবেন বাড়িতে চোর ঢুকেছে। সাথে সাথেই তার পাশে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র তুলে নিয়ে বাথরুমের বন্ধ দরজার দিকে চারটি গুলি ছোড়েন।

রিভা তখন বাথরুমের ভেতরেই ছিলেন। প্রতিটি গুলি দরজা ভেদ করে তার শরীরে ঢুকে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই রিভা মারা যান।

আদালতের লড়াই: দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত হত্যা?

পিস্টোরিয়াস শুরু থেকেই দাবি করেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। তিনি জানতেন না, রিভা বাথরুমে ছিলেন। কিন্তু আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, এটি একটি স্পষ্ট হত্যাকাণ্ড।

তারা জানান, ঘটনার আগে রাতেই তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সম্ভবত রিভা বিরক্ত হয়ে বাথরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করেন, আর তখনই ঘটে ভয়াবহ সেই ঘটনা।

আদালতের সামনে আনা হয় মেসেজ, টেক্সট এবং প্রতিবেশীদের সাক্ষ্য, যেখানে উঠে আসে তাদের সম্পর্কে অবিশ্বাস, ভয় এবং মানসিক নির্যাতনের আলামত।

সাজা এবং সমাপ্তি

প্রথমে অস্কার পিস্টোরিয়াসকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় নরসেহতের অভিযোগে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে এই রায়। পরে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ আদালত রায় পুনর্বিবেচনা করে তাকে ১৩ বছরের বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।

আজও পিস্টোরিয়াস বন্দি জীবনযাপন করছেন। আর রিভা স্টিনক্যাম্পের পরিবারের কাছে ভালোবাসা দিবস মানেই কেবল শোক, ক্ষত আর বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘশ্বাস।

এই কাহিনি আমাদের কী শেখায়?

প্রেম ও বিশ্বাস একে অপরের সঙ্গে জড়িত। যেখানে বিশ্বাস নেই, সেখানে ভালোবাসা মানেই সন্দেহ, মানসিক অবসাদ আর বিপদের আশঙ্কা। পিস্টোরিয়াস ও রিভার কাহিনি তাই কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং একটি ব্যর্থ সম্পর্কের ভয়ংকর পরিণতি।


আপনি কী মনে করেন?

এই ঘটনা কি নিছক ভুল বোঝাবুঝি ছিল, নাকি ঠান্ডা মাথার খুন? নিচে আপনার মতামত জানান। প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক দিন এবং শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সঙ্গে। সচেতনতা ছড়ানোই হতে পারে আগামী কোনো রিভা স্টিনক্যাম্পকে রক্ষা করার উপায়।