Home কৃষি সিরাজদিখানে এক কলাগাছে ১৪ মোচা, রহস্য জানালেন কৃষিবিদরা

সিরাজদিখানে এক কলাগাছে ১৪ মোচা, রহস্য জানালেন কৃষিবিদরা

১৪ মোচা কলাগাছ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মুন্সিগঞ্জ:  সিরাজদিখান উপজেলার শেখরনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ হাটী গ্রামে একটি কলাগাছ জন্ম দিয়েছে ১৪টি মোচা। প্রতিটি থোড় থেকেই স্বাভাবিকভাবে কলাও গজাচ্ছে। এই অস্বাভাবিক ঘটনাটি ঘিরে গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। প্রতিদিন শত শত মানুষ ছুটে আসছেন ঘটনাস্থলে, ছবি তুলছেন, কেউ কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে অন্যদের জানাচ্ছেন। ভিড় সামাল দিতে গাছের চারপাশে জাল দিয়ে ঘেরা হয়েছে এবং টানানো হয়েছে সতর্কতামূলক নিশানা।

স্থানীয় বাসিন্দা রতন মণ্ডল জানান, চারদিন আগে তিনি প্রথমবারের মতো এ ঘটনা লক্ষ্য করেন। এরপর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। কলাবাগানের মালিক ময়না মজুমদার নিজেও বিষয়টি নিয়ে বিস্মিত। তিনি বলেন, “এরকম কিছু আগে দেখিনি। শুরুতে ভেবেছিলাম হয়তো কোনো রোগ বা অস্বাভাবিকতা, কিন্তু এখন প্রতিটি থোড় থেকে কলা গজাতে দেখে মনে হচ্ছে এটি প্রকৃতির এক অদ্ভুত খেয়াল।”

৭ নম্বর শেখরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রকাশ সরকার বলেন, “আমার বাড়ির একেবারে পাশে গাছটি। প্রতিটি মোচা থেকেই কলা হচ্ছে—আমি এটিকে সৃষ্টিকর্তার কুদরত বলেই মনে করি।”

তবে কৃষি বিশেষজ্ঞরা ঘটনাটিকে ‘অস্বাভাবিক হলেও ব্যতিক্রমধর্মী প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। সিরাজদিখান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, “কলাগাছে সাধারণত একটি মোচাই দেখা যায়, যার থেকে কলার থোড় বের হয়। তবে এটি একটি ব্যতিক্রম উদাহরণ, যাকে আমরা ‘হরমোনাল ডিসঅর্ডার’ বলি। এই অবস্থায় গাছের ভিতরে উৎপন্ন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে একাধিক মোচা বের হতে পারে। আবহাওয়া, মাটির পুষ্টিগুণ এবং জিনগত বৈচিত্র্য এমন ঘটনার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাছের গ্রোথ হরমোন যেমন ‘সাইটোকাইনিন’ ও ‘জিব্বারেলিন’-এর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি বা অস্বাভাবিক মিশ্রণ এমন ফলাফল ডেকে আনতে পারে। দক্ষিণ ভারতে এবং বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলেও অতীতে ৮-১০টি মোচা বিশিষ্ট কলাগাছের খবর পাওয়া গেছে। তবে ১৪টি মোচা সত্যিই একটি বিরল ঘটনা।

২০২২ সালে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় একটি কলাগাছে ১১টি মোচা দেখা গিয়েছিল, যা নিয়েও স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের এক কৃষিজ গ্রামে ২০১৯ সালে ১৩টি মোচাবিশিষ্ট কলাগাছ নজরে আসে।

এ বিষয়ে ঢাকা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল আরেফিন বলেন, “এটি জিনগত মিউটেশনের ফলেও হতে পারে। কিছু বংশগত বৈশিষ্ট্যের প্রভাবে গাছ এমন অস্বাভাবিক মোচা তৈরি করতে পারে। এটি রোগ নয়, বরং একটি বিরল জৈবিক ঘটনা। তবে উৎপাদনশীলতার দিক দিয়ে এসব গাছ সাধারণ গড় কলাগাছের মতোই ফল দেয়।”

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, গবেষণার উদ্দেশ্যে এমন গাছের নমুনা সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যাতে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক হরমোন ভারসাম্য নিয়ে আরও গবেষণা সম্ভব হয়।