Home স্বাস্থ্য ৩৬ থেকে ৪৬: কেন এই দশক আপনার জীবনের মোড় ঘোরাতে পারে

৩৬ থেকে ৪৬: কেন এই দশক আপনার জীবনের মোড় ঘোরাতে পারে

হেলথ ডেস্ক:

আমাদের অনেকের জন্য বিশের দশক যেন এক উচ্ছৃঙ্খল জীবনের অধ্যায়। রাতভর পার্টি, ধূমপান, অ্যালকোহল আর ব্যায়ামের প্রতি উদাসীনতা এই বয়সে অনেকটাই সাধারণ। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, ত্রিশের মাঝামাঝি থেকে এই জীবনযাত্রার কুফল আমাদের শরীরে স্পষ্টভাবে দেখা দিতে শুরু করে।

ফিনল্যান্ডে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশের দশকে অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপানের তেমন গুরুতর শারীরিক ফল দেখা না গেলেও ৩৬ বছর পার হওয়ার পর এই অভ্যাস চালিয়ে গেলে শরীর দ্রুত ভেঙে পড়তে শুরু করে। বাড়ে বিষণ্ণতা, ক্যানসার, হৃদরোগ, ফুসফুসের অসুখ এবং অকালমৃত্যুর ঝুঁকি।

দশকের বাঁকফেরানো মুহূর্ত

এই ৩৬ থেকে ৪৬ বছর বয়সের সময়টাই ঠিক করে দেয়, ভবিষ্যতে আপনি কতটা সুস্থ থাকবেন। চিকিৎসক ও গবেষকেরা বলছেন, এই সময় শরীরের কোষে পূর্বের সমস্ত অপচয়ের হিসাব জমা হতে থাকে। ধীরে ধীরে শরীরের কোষগুলো ‘সেনেসেন্ট’ হয়ে পড়ে অর্থাৎ, সেগুলো আর বিভাজিত হয় না কিন্তু আশপাশের কোষে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

এই বয়সে ধূমপান ও অ্যালকোহলের ক্ষতি দ্রুত বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৫ বছরের আগেই ধূমপান ছেড়ে দিলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। কিন্তু ৪০-এর পর থেকে ফুসফুসের ক্যানসারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকে। একদিকে পুরুষদের মধ্যে এই হার বেড়ে চলে দ্রুত, অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে বাড়ে ধীরে ধীরে।

হরমোন ও চাপ: একসাথে বিপদ

এই বয়সের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো হরমোনের পরিবর্তন। নারীদের ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের পরিমাণ কমে আসে, শুরু হয় মেনোপজের প্রস্তুতি। ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।

পুরুষদের ক্ষেত্রেও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়, ফলে হাড় দুর্বলতা ও বিপাকক্রিয়া সমস্যা দেখা দেয়। এই সময় চাকরির চাপে, সংসারের দায়িত্বে অনেকেই অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, যা হরমোন হ্রাসকে আরও ত্বরান্বিত করে।

এখনই সময় বদলের

ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য রক্ষায় এই দশক সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বদলে যাওয়ার। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩৬ থেকে ৪৬ বয়সে ছোট ছোট পরিবর্তনও দীর্ঘমেয়াদে বড় প্রভাব ফেলে। যেমন—

ধূমপান বন্ধ করুন: এখনই ছেড়ে দিলে আয়ু বাড়তে পারে ৬ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত।

অ্যালকোহল সীমিত করুন: সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের কম পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

ব্যায়াম করুন: প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম এবং নিয়মিত শক্তিবর্ধক অনুশীলন করুন।

পুষ্টিকর খাবার খান: চিনিযুক্ত, প্রসেসড খাবার বাদ দিয়ে রঙিন সবজি, বাদাম, ডাল ও ফারমেন্টেড খাবার খান।

ঘুম ও মানসিক স্বস্তির গুরুত্ব: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম এবং ধ্যান-শ্বাসপ্রশ্বাস চর্চা করুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন সি, ডি, বি-কমপ্লেক্স, ওমেগা-থ্রি ও ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। এসব উপাদান হৃদরোগ, মানসিক চাপ ও ঘুমজনিত সমস্যা কমাতে কার্যকর।

এই বয়সে সময় ও দায়িত্বের চাপে নিজের যত্ন নেওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে। তবু ছোট ছোট ইতিবাচক অভ্যাসই আগামী দশকগুলোয় বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

  • “আপনি এখন কোন বয়সে আছেন? স্বাস্থ্য বদলে দেওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হয়তো এখনই! অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন, ভবিষ্যতের সুস্থতা নিশ্চিত করুন। আজ থেকেই শুরু করুন। ধূমপান ছাড়ুন, খাবারে সচেতন হোন, আর প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা হাঁটুন।”

♦”এই প্রতিবেদনটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তবে একে শেয়ার করুন বন্ধু-পরিবারের সঙ্গে। ৩৬ থেকে ৪৬ বছর বয়সের এই দশক আমাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে আপনার একটি শেয়ার হয়তো কারও জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।”