বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা:বাংলাদেশের গাড়ি বাজারে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চাহিদা আশানুরূপ বেড়েছে। অপরদিকে, জাপানে এই খাতটি ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে, যদিও সেখান থেকেই বাংলাদেশের বেশিরভাগ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়।
বাংলাদেশে নতুন গাড়ির উচ্চমূল্য, আমদানি শুল্ক এবং সড়কে ব্যবহারের উপযোগী পুরোনো গাড়ির সংকটের কারণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৩২ হাজার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে, যার ৯০ শতাংশের বেশি জাপান থেকে এসেছে।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের জন্য ৫ থেকে ৮ বছর পুরোনো জাপানি গাড়িই সবচেয়ে জনপ্রিয়, বিশেষত টয়োটা, হোন্ডা এবং নিশান ব্র্যান্ড।
সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, “জাপানের গাড়ির মান, মাইলেজ এবং ডকুমেন্টেশন স্বচ্ছ হওয়ায় বাংলাদেশি বাজারে এর গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তবে সাম্প্রতিক ডলারের সংকট ও আমদানি শুল্ক বাড়ায় খরচ কিছুটা বেড়েছে।”
অন্যদিকে, জাপানে স্থানীয়ভাবে নতুন গাড়ির উৎপাদন এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি আগ্রহ বাড়ার ফলে পুরোনো গাড়ি বিক্রির চাহিদা কমে যাচ্ছে। জাপানের পরিবেশনীতি অনুযায়ী পুরোনো গাড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং অনেক গাড়িই নিলামে কম মূল্যে রপ্তানির জন্য তুলে দেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া ও পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সেগুলোর চাহিদা বাড়ছে।
টোকিওভিত্তিক গাড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান Nikkyo Co. Ltd-এর ব্যবস্থাপক তাকাশি হোশিনা বলেন, “জাপানে EV ও হাইব্রিড গাড়ির ব্যাপক প্রচার ও সরকারিভাবে ভর্তুকি পাওয়ার কারণে অনেকেই পুরোনো গাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো উপকৃত হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব যানবাহনের দিকে বিশ্ব যখন ধাবিত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশকেও রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির পাশাপাশি হাইব্রিড ও EV গাড়ি ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নিতে হবে।
বাংলাদেশে রিকন্ডিশন্ড এবং ইলেকট্রিক গাড়ির (EV) বাজার বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু অর্থনৈতিক ও নীতিগত কারণ কাজ করছে। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো:
দেশে নতুন গাড়ি কেনা এখনো অনেকের সাধ্যের বাইরে। তুলনামূলকভাবে কম দামে ভালো মানের রিকন্ডিশন্ড জাপানি গাড়ি কেনা সম্ভব হওয়ায় এদের প্রতি মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ঝোঁক বেশি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুদ্রাস্ফীতির কারণে মানুষ খরচে আরও সচেতন হয়েছে। তাই কম মূল্যে ভালো মানের ব্যবহৃত গাড়ি যেমন রিকন্ডিশন্ড বা দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী EV-এর প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে।
জ্বালানির দাম বাড়ায় ইলেকট্রিক গাড়ির প্রতি ঝোঁক বাড়ছে, যেগুলোর চলমান খরচ অনেক কম।
বাংলাদেশ সরকার ইলেকট্রিক ভেহিকল আমদানিতে আমদানি শুল্ক ও রেজিস্ট্রেশন ফিতে ছাড় দিয়েছে। এতে EV-র বাজার চাঙা হচ্ছে।
বিগত বছরগুলোতে জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তুলনামূলকভাবে কম ছিল, ফলে আমদানিকারকেরা বেশি সক্রিয় হয়েছে।
সরকার ২০২১ সালে EV নীতিমালা চালু করে, যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% পরিবহনকে ইলেকট্রিক করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে বাজারে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য সরকার পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে। এতে করে EV ব্যবহারে আগ্রহ বেড়েছে।