বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পূর্ণমাত্রায় কার্গো পরিবহন কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারের এয়ার কার্গো অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে রপ্তানি বাণিজ্যে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে।
ইতোমধ্যে অব্যবহৃত ২৭০ টন ধারণক্ষমতার কার্গো স্টেশনটি চালু করার কাজ শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যমান অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং চীনের সঙ্গে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নেওয়া এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।
চট্টগ্রাম-চীন রুটে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়ে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় কাস্টমস, সিএন্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে তিন ধাপে—স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে—পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে সর্বোচ্চ এয়ার কার্গো সুবিধা ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পর, বাংলাদেশ নিজস্ব এয়ার ফ্রেইট সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে। বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বলেন, “এখন আমরা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউরোপসহ গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে সরাসরি কার্গো পরিবহন সম্ভব হবে।”
শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলেছে। কোল্ড স্টোর নির্মাণ, আধুনিক কার্গো মেশিনারিজ সংযোজন এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে জার্মানির কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে।
তবে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। ভয়েজার এভিয়েশনের ম্যানেজার মোরশেদুল আলম বলেন, “শুধু কার্গো ফ্লাইট চালু করলেই হবে না, আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা সুবিধা, যেমন ইডিএস এবং আরএ-থ্রি সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করা জরুরি।”
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো বিভাগের পরিচালক শাকিল মেরাজ জানিয়েছেন, চট্টগ্রামেও সিলেটের মতো গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২৭ এপ্রিল সিলেট থেকে গ্যালিস্টেয়ার এভিয়েশনের ৬০ টন রপ্তানি পণ্য নিয়ে স্পেনের উদ্দেশে প্রথম ফ্লাইট ছাড়বে।
সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া বলেন, “তৃতীয় টার্মিনাল চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত অতিরিক্ত জনবল ও সরঞ্জাম দিয়ে কার্গো সেবা উন্নত করার চেষ্টা চলছে। চট্টগ্রামে কার্গো ফ্লাইট বাড়াতে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।”
এক সময় শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে থাই এয়ার, সিল্ক এয়ার, কুয়েত এয়ার, ইতিহাদ ও এমিরেটসের কার্গো ফ্লাইট চলাচল করত। ২০২২ সালের পর থেকে এসব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। কাস্টমস জটিলতার কারণে আমদানি কার্গো প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার অনুরুপা দেব জানিয়েছেন, কার্গো ফ্লাইট চালু সংক্রান্ত সভায় কাস্টমস জটিলতার বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান নিশ্চিত করা গেলে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দেশের দ্বিতীয় প্রধান এয়ার কার্গো হাবে পরিণত হতে পারে। এতে গোটা দেশের রপ্তানি ও অর্থনীতি ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।
বিজিএমইএর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ এম চৌধুরী সেলিম বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হলে আমাদের সময় ও খরচ দুটোই কমে যাবে। ঢাকায় পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা কমবে, যা রপ্তানিতে গতি আনবে।”
ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরেই শাহ আমানত বিমানবন্দরে উন্নত এয়ার কার্গো সুবিধার দাবি জানিয়ে আসছেন। শিল্পাঞ্চলগুলোর সম্প্রসারণের সঙ্গে এ চাহিদা আরও বেড়েছে। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও নিরাপত্তা সুবিধা নিশ্চিত করাই সময়ের দাবি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।