Home আন্তর্জাতিক ঝিলমের ঢেউয়ে ‘জল-যুদ্ধ’ শুরুর ইঙ্গিত! পাকিস্তানের কঠোর হুঁশিয়ারি

ঝিলমের ঢেউয়ে ‘জল-যুদ্ধ’ শুরুর ইঙ্গিত! পাকিস্তানের কঠোর হুঁশিয়ারি

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জলসীমা নিয়ে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর  থেকে পূর্ব নোটিশ ছাড়াই অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে ঝিলম নদীর পানি হঠাৎ করে বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায়।

শনিবার বিকেলে নদীর পানির প্রবাহ ২২,০০০ কিউসেক ছাড়িয়ে যায়, ডোমেল এলাকায় বন্যাসদৃশ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। স্থানীয় প্রশাসন হাতিয়ান-বালা সহ আশপাশের এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে। মসজিদ ও প্রশাসনের তরফে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানকে কোনো আগাম সতর্কতা ছাড়াই ভারত ঝিলমে পানি ছেড়েছে, যার ফলে আচমকাই নদীর স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মুজাফফরাবাদ জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারতের পানি ছাড়ার কারণে মাঝারি মাত্রার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। এটি ঘটেছে এমন সময়ে যখন পহেলগাম হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে এবং ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক ইন্দাস পানি চুক্তি  একতরফাভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেয়।

নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপের পর, পাকিস্তান তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছে, সিন্ধু নদের পানি প্রবাহ বন্ধের যে কোনো চেষ্টা “যুদ্ধ ঘোষণার” সমান হবে এবং পাকিস্তান তার স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেবে। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের জীবনধারা এই পানির ওপর নির্ভরশীল, এবং পানি পাকিস্তানের জন্য একটি অমোঘ জাতীয় স্বার্থের বিষয়।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো সরাসরি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন,

“সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হলে বইবে ভারতীয়দের রক্ত।”

অন্যদিকে ভারতের জলশক্তিমন্ত্রী জানিয়েছেন, যদিও বর্তমানে সিন্ধু নদীর পানির প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার মতো অবকাঠামো ভারতের হাতে নেই, তবে ভবিষ্যতে সে লক্ষ্যেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

ঝিলম নদী সিন্ধু নদীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপনদী, যা পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে জলবণ্টন চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সিন্ধু নদ পানি চুক্তির আওতায় ভারত-পাকিস্তান নিজেদের জলসম্পদ ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে আসছিল এতদিন। একতরফা এই চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় সংকেত বহন করছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

বর্তমানে ঝিলম নদীর পানি পরিস্থিতি ও সিন্ধু চুক্তি ইস্যু নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে অস্থিরতার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।