বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বিশ্বব্যাপী গাড়ি উৎপাদন ও রফতানির জন্য অন্যতম পরিচিত নাম জাপান। তবে শুধু নতুন গাড়ি নয়, ব্যবহৃত বা ‘রিকন্ডিশন্ড’ গাড়ির বাজারেও দেশটি তার শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বহু বছর ধরে। উন্নত প্রযুক্তি, যন্ত্রাংশের গুণগত মান এবং টেকসই ব্যবহারের কারণে জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে বৈশ্বিক বাজারে।
২০২৩ সালে জাপান থেকে রফতানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ লাখ ৩৬ হাজার। এটি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়েনের অবমূল্যায়নের কারণে জাপানি গাড়ি তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে ওঠায় আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি, জাপানের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে গাড়ির বয়স তিন থেকে পাঁচ বছর পেরোলেই অনেক সময় সেটি পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে রফতানির উপযোগী করে তোলা হয়। এতে গাড়িটি কার্যত নতুনের মতোই পারফর্ম করে।
জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির প্রধান ক্রেতা দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, রাশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও অনেক দেশ। বাংলাদেশের ব্যক্তিগত গাড়ির বাজারে প্রায় ৯০ শতাংশই রিকন্ডিশন্ড, যার বেশিরভাগই আসে জাপান থেকে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা জানান, জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মূল আকর্ষণ হলো এর মাইলেজ, রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা ও বিশ্বস্ততা। খুচরো যন্ত্রাংশ সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবহারকারীরাও স্বস্তিতে থাকেন।
দাম ও মানে যতই সুবিধা থাকুক না কেন, রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারেও বাধা আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মাথায় রেখে অনেক দেশ এখন পুরনো গাড়ির আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করছে। পরিবেশবান্ধব যানবাহনের দিকে বিশ্বের ঝোঁক বাড়ছে, ফলে ইলেকট্রিক গাড়ির (EV) চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
এছাড়াও কিছু দেশে স্থানীয় শিল্প রক্ষার স্বার্থে বিদেশি ব্যবহৃত গাড়ির ওপর শুল্ক ও বিধিনিষেধ বাড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমন কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। ডলার সংকট ও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এই বাস্তবতায় জাপানের অনেক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এখন ইলেকট্রিক রিকন্ডিশন্ড গাড়ি প্রস্তুত ও রফতানিতে মনোযোগী হচ্ছেন। তাঁদের মতে, ভবিষ্যতের বাজারে টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলানোই একমাত্র উপায়।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মান ও নির্ভরযোগ্যতা এতটাই শক্ত যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এ বাজার আরও বহু বছর ধরে সচল থাকবে। তবে পরিবেশবান্ধব নীতি মেনে, নতুন প্রযুক্তির গাড়ি অন্তর্ভুক্ত করে এই বাজারকে আরও আধুনিক ও টেকসই করে তোলাই হবে আগামী দিনের চাবিকাঠি।