Home সারাদেশ বৈশাখের উৎসবের ছায়ায় শিশু হত্যার কলঙ্ক, বড়াইগ্রামে তোলপাড়

বৈশাখের উৎসবের ছায়ায় শিশু হত্যার কলঙ্ক, বড়াইগ্রামে তোলপাড়

আটক ৫ জন। ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রামের শিশু আকলিমা আক্তার জুঁই (৭)-এর নির্মম মৃত্যু ঘিরে যে বেদনার্ত প্রশ্ন জেগেছিল, তার উত্তর পাওয়া গেছে পাঁচ দিন পর। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় ৫ কিশোর-যুবকের অমানবিক কাণ্ডের শিকার হয় এই শিশু। তারা পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপনের নামে উচ্ছৃঙ্খলতায় লিপ্ত হয়ে ওই শিশুকে টার্গেট করে।

১৪ এপ্রিল বিকেলে দাদির বাড়ি থেকে বেরিয়ে জুঁই বাড়ির পাশের আমবাগানে যায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল অভিযুক্তরা। সুযোগ বুঝে তারা জুঁইকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায় এবং ঘটনার ভয়াবহতা সেখানেই ঘটে। জ্ঞান হারানোর পর শিশুটিকে হত্যা করা হয়, পরে পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে মুখমণ্ডলে ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয় বলে পুলিশ জানায়।

১৫ এপ্রিল সকালে চাটমোহরের রামপুর বিলের ভুট্টা ক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই নির্মম ঘটনা এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও শোকের জন্ম দেয়। মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়, মানববন্ধন করে।

পুলিশের ধারাবাহিক অনুসন্ধান ও অভিযান চালিয়ে বড়াইগ্রাম, চাটমোহর ও নাটোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজন কিশোর, একজন দিনমজুর যুবক ও একজন ট্রাক্টর সহকারী। আটক ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন চাটমোহর থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম।

এই ঘটনায় এলাকায় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় এক কৃষক মোবারক আলী বলেন, “আমরা কখনও কল্পনাও করিনি আমাদের এলাকায় এমন ভয়ংকর কিছু হতে পারে। এই শিশুটিকে আমি প্রায়ই হাসিমুখে মাঠে খেলতে দেখতাম।”

এক প্রতিবেশী নারী, রওশন আরা, কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “আমার নিজের একটা নাতনি আছে। ওর বয়সও জুঁইয়ের মতো। এখন কাউকে কোথাও একা যেতে দিতে ভয় লাগে।”

জুঁইয়ের মা পুলিশের কাছে বিচার চেয়ে বলেছেন, “আমার মেয়ে তো আর ফিরবে না। কিন্তু যারা ওর জীবন নিল, তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।”

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযুক্তদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এবং মামলার তদন্ত চলছে। এদিকে শিশু সুরক্ষা ও সামাজিক সচেতনতায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা।