বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পাবনা: মঙ্গলবার সকাল দশটার কিছু পরে হঠাৎ এক প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ ক্যাম্পাস। মুহূর্তেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, কারণ পদার্থবিজ্ঞান ভবনের সামনের একটি প্রাচীন মেহগনি গাছ বজ্রপাতে লম্বালম্বিভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ে। গাছটির গুঁড়ি থেকে শীর্ষ পর্যন্ত বিদ্যুৎচিহ্নিত রং ও ছিন্নভিন্ন কাঠের খণ্ড চোখে পড়ে উপস্থিতদের।
ঘটনার সময় কলেজে উপস্থিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে কেউ হতাহত হননি।
কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক ইমাম বলেন, “আমরা ডিপার্টমেন্টে ক্লাস নিচ্ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। চোখের সামনে দেখি গাছটা মাঝখান থেকে ফেটে দুই ভাগ হয়ে গেছে। আমি আর আলামিন সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাই।”
একই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও গেটের ফটোস্ট্যাট দোকানি। তাঁরা জানান, বজ্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকায় এবং বিকট শব্দ হয়। এরপর দেখা যায় গাছটি ভেঙে গেছে।
কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল আউয়াল মিয়া বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গাছটি ভেঙে পড়েছে, তবে কেউ আহত হয়নি। আমরা গাছটি দ্রুত অপসারণ করব এবং সবাইকে অনুরোধ করব, বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে আশ্রয় না নিতে।”
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমার জীবনে এই প্রথম এত কাছ থেকে বজ্রপাত দেখলাম। সেটা আমাদের ভবনের একদম সামনের গাছেই হয়।”
বজ্রপাত হচ্ছে প্রকৃতির এক তাৎক্ষণিক উচ্চশক্তির বৈদ্যুতিক নির্গমন। মেঘে জমে থাকা ঋণাত্মক ও ভূ-পৃষ্ঠের ধনাত্মক চার্জের মধ্যে হঠাৎ বৈদ্যুতিক ভারসাম্য ঘটলে বজ্রপাত হয়। গাছ সাধারণত মাটির তুলনায় উঁচু হওয়ায় এবং অভ্যন্তরে থাকা জলের কারণে এটি বিদ্যুৎ পরিবাহক হিসেবে কাজ করে। ফলে বজ্রপাত প্রায়ই গাছেই পড়ে।
মেহগনি গাছের মতো লম্বা গাছ যখন সরাসরি বিদ্যুতের আঘাতে পড়ে, তখন অভ্যন্তরীণ স্যাঁতসেঁতে কোষে তাপমাত্রা হঠাৎ অনেক বেড়ে গিয়ে বাষ্পে পরিণত হয়। এই তাপ ও চাপই গাছকে উপড় থেকে গোড়া পর্যন্ত ফাটিয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রপাতের সময় গাছের ভেতরের জলীয় পদার্থ হঠাৎ বাষ্পে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়ায় চাপ বেড়ে গিয়ে গাছ ফেটে যায় বা দ্বিখণ্ডিত হয়।
এ ধরনের ঘটনায় অতীতে বিভিন্ন দেশে গাছ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার নজির আছে। যেমন কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়াতে একটি পাইন গাছ বজ্রপাতে মাঝ বরাবর ফেটে যায়।