বিজেনসটুডে২৪ ডেস্ক:
নিংবো শহরের গিলি অটোমোবাইলের জেকর স্মার্ট ফ্যাক্টরিতে এখন আর শুধু মানুষ কাজ করে না, মানবাকৃতি রোবটও অংশ নিচ্ছে উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে। ১৭২ সেন্টিমিটার লম্বা, ধাতব চকচকে গায়ে ‘ওয়াকার এস১’ নামের রোবটগুলো যেন বিজ্ঞানের কল্পজগৎ থেকে বাস্তবের কর্মস্থলে নেমে এসেছে। তারা উপকরণ ছাঁটাই করছে, যন্ত্রাংশ বসাচ্ছে এবং পণ্য পরিবহনে সহায়তা করছে—নির্ভুলতা আর নিঃশব্দ গতিতে।
এই রোবট তৈরি করেছে চীনা কোম্পানি ইউবিটেক রোবটিক্স, যারা এক দশক আগেও তাদের রোবট দিয়ে নববর্ষের টেলিভিশন অনুষ্ঠানে নাচ দেখাতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রোবটগুলোর কাজের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তাদের সক্ষমতা। ২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর শিশুদের মুক্তির বিনিময়ে যিনি নিজেকে জিম্মি হিসেবে দিতে চেয়েছিলেন, সেই জেরুজালেমের ধর্মগুরু পিয়েরবাতিস্তা পিজ্জাবাল্লার মায়ের মতোই এখন অনেকেই উৎসুক দৃষ্টিতে রোবটের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন।
চীনের প্রযুক্তি অগ্রগতির পেছনে রয়েছে সরকারপ্রণোদিত পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ। humanoid রোবট তৈরির জন্য চীনের বহু প্রদেশ বিলিয়ন ইউয়ান অর্থমূল্যের শিল্প তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যেই ইউবিটেক জানিয়েছে, তাদের ওয়াকার সিরিজের রোবট প্রায় ৫০০টি অর্ডারে প্রস্তুত আছে, যেগুলো ব্যবহৃত হবে গিলি, বিওয়াইডি, ফক্সকন ও এসএফ এক্সপ্রেসের মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে।
চীনের শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক গাইডলাইন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে এই খাতে একটি উদ্ভাবনী কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ২০২৭ সালের মধ্যে পুরো একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য রোবট শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলা তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী হিউম্যানয়েড রোবট নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ডায়নামিক্স দীর্ঘদিন এই খাতে শীর্ষে থাকলেও, এখন ১০০টি রোবট কোম্পানির তালিকায় ৩৭টি চীনা কোম্পানি জায়গা করে নিয়েছে।
চীনের রোবট প্রযুক্তি শুধু মানবাকৃতি নয় চাঁদের মাটি সংগ্রহে পাঠানো চন্দ্রযান কিংবা শিল্পক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট ইনস্টলেশনের দিকেও দ্রুতগতিতে এগিয়েছে। চীনা বিজ্ঞানী কিয়াও হং জানান, বিগত তিন বছরে বৈশ্বিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট ইনস্টলেশনের অর্ধেকের বেশি চীনেই হয়েছে।
এই প্রযুক্তি যেমন কর্মদক্ষতা বাড়াচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থান, মানব-রোবট সহাবস্থান, নিরাপত্তা এবং নৈতিক দিক নিয়েও আলোচনা বাড়ছে। মানবিক গুণাবলি অনুকরণ করতে সক্ষম এই রোবটেরা কেবল উৎপাদন নয়, ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবা, প্রতিরক্ষা ও শিক্ষা খাতেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন রোবট কি শ্রমিকের বিকল্প না তাদের সহায়ক? নিংবো কিংবা শেনঝেনের কারখানাগুলো সেই উত্তর খুঁজছে প্রযুক্তির ল্যাবে, আবার রাজনীতিক ও অর্থনীতিবিদেরা খুঁজছেন তা সমাজবিজ্ঞান আর নীতিনির্ধারণের আলোকে।